কার কর্মসূচি ‘অফিশিয়াল’ ২১ জুলাইয়ের ধন্দে দ্বিধায় বিজেপি শিবির

কার কর্মসূচি ‘অফিশিয়াল’ ২১ জুলাইয়ের ধন্দে দ্বিধায় বিজেপি শিবির

একদিকে ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ, অন্যদিকে শিলিগুড়িতে বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযান। সঙ্গে মঞ্চ সাজিয়ে খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ। তৃণমূলকে পাল্টা দিতে গিয়ে বিভ্রান্তিই কি বড় শত্রু হয়ে উঠছে বিজেপির?

টক্কর দেওয়ার প্রস্তুতি নাকি আত্মঘাতী সংঘাত?

২১ জুলাই মানেই বাংলার রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনেই শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল কংগ্রেস, যা দলীয় রাজনৈতিক ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত। সেই কর্মসূচিকে টক্কর দিতে বিজেপিও গত কয়েক বছর ধরে নানা উদ্যোগ নেয়, যদিও তার বাস্তব রূপ খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু ২০২৫-এর ২১ জুলাই যেন আলাদা। এ বার রাজ্য বিজেপি অনেক বেশি সংগঠিত ও প্রস্তুত বলেই দাবি করছে নিজেদের।

উত্তরকন্যা অভিযানে নেতৃত্বে শুভেন্দু, নজর উত্তরবঙ্গে

বিজেপির যুব মোর্চা আয়োজিত ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর কথা মাস খানেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু শিলিগুড়ি, যেখানে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর ‘উত্তরকন্যা’। শুভেন্দু নিজে উপস্থিত থাকবেন এই অভিযানকালে— এমনটাও আগে থেকেই জানিয়ে রাখা হয়েছে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলাকে এই কর্মসূচির আওতায় আনতে মাঠে নেমেছেন জেলা নেতৃত্বও। ফলে দলীয় স্তরেই এটাই বিজেপির ‘অফিশিয়াল’ পাল্টা কর্মসূচি বলে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে পদ্ম শিবির।

তবে কোথায় দাঁড়ান দিলীপ ঘোষ? খড়্গপুরে আলাদা মঞ্চ!

একই দিনে, রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ আলাদা শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি সভার আয়োজন করেছেন খড়্গপুরে। সেখানেও উপস্থিত থাকবেন একাধিক বিজেপি নেতা এবং মেদিনীপুরের শহিদ পরিবার। কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে ধন্দ। দিলীপের সভা কি তৃণমূলের সমাবেশের পাল্টা? নাকি শুভেন্দুর ‘উত্তরকন্যা অভিযান’-এর এক ভিন্ন সমান্তরাল প্রচেষ্টা? এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত বিজেপির অন্দরমহল।

দলীয় বার্তা পরিষ্কার— ‘অফিশিয়াল পাল্টা’ উত্তরকন্যাই

দলের একাংশ অবশ্য স্পষ্ট করতে চাইছে, দিলীপ ঘোষের কর্মসূচি নিয়ে আপত্তি না থাকলেও, রাজ্য নেতৃত্বের তরফে একমাত্র অফিসিয়াল পাল্টা কর্মসূচি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে উত্তরকন্যা অভিযানকেই। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “দিলীপদার কর্মসূচি সম্মানীয়। কিন্তু সেটি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রভিত্তিক। উত্তরকন্যা অভিযান রাজ্যজুড়ে বার্তা দিচ্ছে।” কলকাতা থেকে বহু নেতা শিলিগুড়ির দিকে রওনা হয়েছেন, তা থেকেই স্পষ্ট— কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজর শুভেন্দুর দিকেই বেশি।

রাজনৈতিক কৌশলের অন্দরে দ্বন্দ্বের ছায়া

একদিকে যেভাবে শুভেন্দু বিজেপিকে সংগঠিতভাবে পথে নামানোর চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে দিলীপ ঘোষ নিজের প্রভাব ধরে রাখতে আলাদা মঞ্চ তৈরি করেছেন। বিজেপির উচ্চপদস্থ মহলেও এই দুই নেতা ও তাঁদের কর্মসূচি নিয়ে মতভেদ স্পষ্ট। যদিও প্রকাশ্যে দলীয় শৃঙ্খলার কথা বলে বিষয়টি হালকা করা হচ্ছে, তবুও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন— এই দ্বন্দ্ব বিজেপির আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা উন্মোচন করছে।

তৃণমূলের নজর ধর্মতলা, বিজেপির চোখ ‘কনভার্সন রেট’-এ

ধর্মতলায় শহিদ সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বার্তা দেন, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বিজেপির পাল্টা কর্মসূচির বাস্তব সাফল্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধু কর্মসূচি ঘোষণা করলেই চলবে না— রাস্তায় জনসমাগম, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, এবং সরকারবিরোধী কার্যকর বার্তা আদৌ পৌঁছচ্ছে কি না, সেটাই মূল ‘কনভার্সন রেট’ নির্ধারণ করবে।

Leave a comment