মিসিসিপিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বয়সের প্রমাণ বাধ্যতামূলক: বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

মিসিসিপিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বয়সের প্রমাণ বাধ্যতামূলক: বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

মিসিসিপিতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য বয়স জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন আইনের মাধ্যমে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু টেক কোম্পানিগুলো একে প্রাইভেসি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছে।

Age Verification Law: সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়া এখন আর আগের মতো সহজ নেই। আমেরিকার মিসিসিপি রাজ্য এমন একটি নতুন আইন লাগু করেছে, যা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের আগে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর থেকে তাদের বয়সের প্রমাণ চায়। এই আইনের উদ্দেশ্য শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা জোরদার করা হলেও, এই পদক্ষেপ টেক কোম্পানিগুলোকে ক্ষুব্ধ করেছে। তারা একে প্রাইভেসি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হিসেবে দেখছে। 

মিসিসিপির নতুন 'এজ ভেরিফিকেশন আইন' কী?

মিসিসিপিতে লাগু হওয়া Age Verification Law অনুযায়ী, এখন কোনো ব্যক্তি যদি Facebook, Instagram, Snapchat অথবা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে চান, তাহলে তাকে প্রথমে নিজের বয়সের প্রমাণ দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর জন্য এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে তারা প্রত্যেক নতুন ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করবে। যদি কোনো ব্যবহারকারী বয়সের প্রমাণ দিতে না পারে, তাহলে তাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এই নিয়ম সরাসরি কম বয়সি শিশুদের অনলাইন বিপদ থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

কেন আনা হল এই কঠোর আইন?

এই আইনের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে শিশুদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে অনেক রিপোর্ট এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে শিশুরা মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন, সাইবার বুলিং, অশ্লীলতা এবং এমনকি আত্মহত্যার মতো গুরুতর বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। অভিভাবক এবং শিশু সুরক্ষা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল, যাতে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। সেই দিকে তাকিয়েই এই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আদালতের রায় দিয়েছে মঞ্জুরি

যদিও প্রথমে একটি আদালত এই আইনের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল, কিন্তু এখন আমেরিকার 5th সার্কিট ইউএস কোর্ট অফ আপিলস-এর তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ সেই স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে। এখন এই আইন পুরোপুরি আইনি প্রক্রিয়ার অধীনে লাগু করা যেতে পারে। এর ফলে মিসিসিপি আমেরিকার সেই কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে शामिल হল যেখানে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষার জন্য কঠিন আইন কার্যকরভাবে লাগু করা হয়েছে।

টেক কোম্পানিগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া

টেক ইন্ডাস্ট্রি এই আইনের কারণে খুবই ক্ষুব্ধ। NetChoice নামক একটি সংস্থা, যারা Meta (Facebook, Instagram), Google (YouTube), এবং Snap Inc. (Snapchat) এর মতো বড় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। NetChoice-এর যুক্তি হল, এই আইন ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ এবং প্রাইভেসির অধিকার লঙ্ঘন করে। তাদের বক্তব্য, শিশুদের জন্য কী উপযুক্ত, তা ঠিক করা সরকারের নয়, বরং বাবা-মায়ের অধিকার।

কোন কোন রাজ্য বানাচ্ছে এই ধরনের আইন?

মিসিসিপি একা নয়, আরও অনেক রাজ্য শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর আগে আরকানসাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ওহাইও এবং উটাহ-এর মতো আমেরিকান রাজ্যগুলোতেও এই ধরনের আইন পাশ করা হয়েছে। NetChoice এই রাজ্যগুলোতেও আইনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়েছে। কিন্তু আদালত এখন সরকারের দিকে সমর্থন দেখাচ্ছে।

প্রাইভেসি নাকি সুরক্ষা: কে জিতবে?

এই বিতর্ক এখন দুটি দিকে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। একদিকে তারা আছেন, যারা মনে করেন এই আইন শিশুদের মানসিক ও আবেগিক সুরক্ষার জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ।
অন্যদিকে আছে টেক কোম্পানি ও ডিজিটাল রাইটস অ্যাক্টিভিস্টরা, যারা একে একটি বিপজ্জনক শুরু মনে করছেন — যার ফলে ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সঙ্কটে পড়তে পারে।

ভারতে কি এমন হতে পারে?

ভারতে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নিয়ে সময়ে সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার গত কয়েক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর উপর নজরদারি করার জন্য নিয়ম আরও কঠোর করেছে। আমেরিকাতে যদি এই মডেল সফল হয় এবং ব্যাপক সমর্থন পায়, তাহলে সম্ভবত ভারতসহ অন্যান্য দেশেও এই ধরনের এজ ভেরিফিকেশন আইনের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।

Leave a comment