ভাতা বাড়ল, তবু কি মিলবে পর্যাপ্ত BLO?
নির্বাচন কমিশনের বড় সিদ্ধান্তে বছরে ছ’হাজার থেকে বেড়ে ১২ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছেন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) রা। সুপারভাইজ়ারদের ক্ষেত্রে সেই ভাতা ১২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। এর সঙ্গে স্পেশ্যাল রিভিশন ডিউটি বা ‘সার’-এর জন্য আলাদা করে আরও দু’হাজার টাকা দেওয়ারও কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
এই আর্থিক প্রণোদনার উদ্দেশ্য—BLO-দের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়ানো।
তবে এই বাড়তি অর্থও অনীহার মেঘ সরাতে পারেনি। বুথভিত্তিক বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ আদৌ ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
'নিজের এলাকা'য় দায়িত্ব, কিন্তু কেন অনীহা?
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বুথের ভোটারকেই BLO হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেই তৈরি হচ্ছে বড়সড় সমস্যা।কারণ, কোনও BLO যদি নিজ এলাকার ভুয়ো ভোটার বা অনিয়মের অভিযোগ চিহ্নিত করেন, তবে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের চাপ বা রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে।এই সামাজিক এবং রাজনৈতিক জটিলতাই অনেক BLO পদপ্রার্থীর মধ্যে অনীহার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাড়ছে আবেদন ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও।
BLO নিয়োগে বিপুল ঘাটতি—পরিসংখ্যানে উদ্বেগ
বাংলার বুথ সংখ্যা বর্তমানে ৮০,৬৮১। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতি বুথে ১,২০০ ভোটারের বেশি রাখা যাবে না। তাই নতুন করে আরও প্রায় ১৪ হাজার বুথ গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর অর্থ, BLO-র প্রয়োজন আরও বাড়বে।তবে বাস্তবে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৬৪ হাজার BLO নিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যেও অন্তত ২৫ হাজার BLO তাঁদের নিয়োগপত্রই গ্রহণ করেননি।
এই সংখ্যাই বোঝায়, কাজের প্রতি অনীহা কতটা গভীর!
‘কাজ করতে হবে, না হলে আইনি ব্যবস্থা’— হুঁশিয়ারি নির্বাচন কমিশনেরদক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির মুজরা কানলি ICDS কেন্দ্রের সুপারভাইজ়ার কণিকা মাহাতো নিযুক্ত হন BLO হিসেবে। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব নিতে নারাজ। তিনি নিয়োগপত্রও গ্রহণ করেননি এবং দিল্লির নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে সরাসরি আবেদন জানিয়ে ছাড় চেয়েছেন।তাঁর মতো হাজার হাজার সরকারি কর্মী, শিক্ষক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা প্রতিদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে BLO-র দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির আবেদন জমা দিচ্ছেন।এই পরিস্থিতিতে কমিশনের বক্তব্য, BLO-র দায়িত্ব আইনত বাধ্যতামূলক। দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে নেওয়া হবে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা।
‘ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে’, বলছে কমিশন
রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের মতে, BLO-র কাজ নিয়ে কিছু ভুল বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। তাঁদের মতে, দায়িত্ব সহজ—ভোটারদের ফর্ম বিলি ও জমা নেওয়া। এই কাজ করতে গিয়ে বুথ স্তরের রাজনৈতিক দলের এজেন্টরাও সহায়তা করবেন। প্রয়োজনে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ERO নিজে উপস্থিত থেকে শুনানি ও তদন্তও করবেন।অথচ দায়িত্বের এই সরল চেহারার ভেতর লুকিয়ে আছে সামাজিক চাপ, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রশাসনিক জটিলতা।
শুধু ভাতা বাড়লেই হবে না, দরকার সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা
নির্বাচন কমিশনের আর্থিক উদারতা সত্ত্বেও BLO নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্পষ্ট সংকট দেখা দিচ্ছে। ভাতা বাড়ানো ছাড়াও প্রয়োজন:
BLO-দের সুরক্ষা নিশ্চিত করা,
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা,দায়িত্ব পালনে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ। না হলে শুধু ভাতা বাড়িয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী কাজ সফল করা কঠিন হয়ে পড়বে।