শুক্রবার মধ্যরাতে আচমকাই ভাঙচুর, ব্যান্ডেল স্টেশন চত্বরে মাটির সঙ্গে মিশে গেল অবৈধ দোকানপাট।রাত তখন গভীর, স্টেশন চত্বর নিস্তব্ধ। ঠিক সেই সময় আচমকাই গর্জে উঠল বুলডোজ়ারের ইঞ্জিন। রেলের নোটিস অগ্রাহ্য করেই দোকান চালিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের ঘুম ভাঙল মাটি কাঁপানো ধ্বংসলীলায়। সব রকম বাধা এড়িয়ে নিরবিচারে চলে ভাঙচুর।
পূর্ব ঘোষণা ছিল, বাস্তবায়ন হল অপ্রতিরোধ্যভাবে
উচ্ছেদের নোটিস আগে দিয়েছিল রেল, কিন্তু পাল্টা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক।রেলের তরফে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল—অবৈধ দখল আর বরদাস্ত নয়। চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার সেই নোটিসের প্রতিবাদে ঝাঁটা হাতে মিছিল করেন, দেন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই প্রতিরোধের সামান্য ছায়াও দেখা যায়নি।
নিরাপত্তা বলয়ে নিরবিচারে অভিযান
RPF-র মজবুত ঘেরাটোপে নির্বিঘ্নে চালানো হয় ভাঙচুর, প্রতিরোধ করার সুযোগ পর্যন্ত পেলেন না ব্যবসায়ীরা।প্রচুর RPF মোতায়েন করা হয়েছিল রাতের ওই অভিযানে। আশপাশে থাকা ব্যবসায়ীরা কোনও প্রতিরোধের সুযোগই পাননি। অনেকের কথায়—ভেবেছিলাম, নেতা পাশে দাঁড়াবেন। বাস্তবে কেউ এল না, আর আমাদের দোকান ভেঙে গেল চুপচাপ!
উন্নয়ন বনাম জীবিকার সংঘর্ষ
অমৃত ভারত প্রকল্পে ব্যান্ডেল স্টেশন আধুনিক হবে ঠিকই, কিন্তু তার বলি হল বহু বছরের দোকান।রেল জানিয়েছে, অমৃত ভারত প্রকল্পে ব্যান্ডেল স্টেশনকে রূপান্তর করা হবে আন্তর্জাতিক মানে। সেই কাজ শুরু হতেই প্রয়োজন দখল মুক্ত এলাকা। তাই বহু পুরনো দোকানপাট মুছে ফেলতেই এই কড়া পদক্ষেপ। উন্নয়ন কতটা জরুরি আর মানবিকতা কতটা বিসর্জনযোগ্য, উঠছে প্রশ্ন।
চোরের মতো কাজ করেছে রেল— অভিযোগ বিধায়কের
উচ্ছেদের ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকারের অমানবিক রূপ তুলে ধরলেন তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার।বিধায়ক অসিতবাবু স্পষ্ট বললেন—“রাতের অন্ধকারে চোরের মত কাজ করেছে রেল”। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। দলের সঙ্গে আলোচনার পরে তিনি পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান।
তৃণমূল জানত দখলদারদের রক্ষা করছে— পাল্টা BJP কটাক্ষ
উচ্ছেদে বাধা না দেওয়ায় বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় সমালোচনা করল বিজেপি।বিজেপি নেতা সুরেশ সাউ বলেন—“তৃণমূল নেতারা জানতেন, তাঁরা দখলদারদের সমর্থন করছেন। তাই মাঝরাতে উচ্ছেদের সময় তাঁদের দেখা যায়নি।” তিনি আরও বলেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই নাকি বিধায়ক ‘ঝাঁটা-মিছিল’ করেছিলেন।
ভাড়া দিতাম, বিদ্যুৎ বিল মেটাতাম— ক্ষোভে ফেটে পড়লেন দোকানদাররা
কথায় নয়, প্রমাণ-সহ বলছেন দোকানদাররা—করোনার আগে রেলের সব টাকা দেওয়া হয়েছিল।স্থানীয় দোকানদারদের দাবি, তাঁরা রেলের কাছে ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত জমা দিতেন। তাঁদের কাছে রশিদও রয়েছে। কিন্তু করোনার পর থেকে রেল টাকা নিতে চায়নি। এখন বলছে, তাঁরা অবৈধ! আমরা কি শুধু উন্নয়নের বলি?—প্রশ্ন ক্ষতিগ্রস্তদের।