বর্ষার ঠান্ডা ঝাপটা শরীর ও মনকে শান্তি দিলেও, চুলের জন্য এই ঋতু অনেক সমস্যা নিয়ে আসে। প্রায়শই এই সময়ে লোকেরা চুল পড়ার অভিযোগ করে এবং অনেক সময় এই সমস্যা এতটাই গুরুতর হয়ে যায় যে উদ্বেগ বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে বর্ষাকালে চুল পড়ার পেছনে আবহাওয়ার পরিবর্তন, অভ্যাস এবং মাথার ত্বকের যত্নের অভাব বড় কারণ?
বর্ষা এবং চুলের ক্রমবর্ধমান সমস্যা
বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এই আর্দ্রতা আমাদের ত্বক এবং মাথার ত্বককে প্রভাবিত করে। পরিবেশে বেশি আর্দ্রতা থাকার কারণে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা চুলের গোড়াকে দুর্বল করে দেয় এবং চুল পড়তে শুরু করে। এছাড়াও, এই ঋতুতে ঘাম বেশি হয়, যার কারণে মাথার ত্বক ময়লা ও তেলে ভরে যায়।
চুলের গ্রোথ সাইকেলে পরিবর্তন
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, আমাদের চুলের একটি স্বাভাবিক গ্রোথ সাইকেল আছে, যেখানে চুল বাড়ে, বিশ্রাম নেয় এবং তারপর ঝরে যায়। বর্ষাকালে এই চক্রটি ভারসাম্যহীন হয়ে যায় এবং বেশি চুল ‘টেলোজেন ফেজ’-এ অর্থাৎ বিশ্রামের স্থিতিতে চলে যায়। এই কারণে হঠাৎ করে চুল পড়া শুরু হয়, যাকে টেলোজেন এফ্লুভিয়াম বলা হয়। এটি একটি স্বাভাবিক অবস্থা, তবে সঠিক যত্ন না নিলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে।
মাথার ত্বকে সংক্রমণ এবং ফাঙ্গাসের সমস্যা
বর্ষাকালে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। আর্দ্রতা, ঘাম এবং ভেজা চুল মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যকর মাইক্রোবায়োমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল ভাঙতে শুরু করে। মাথার ত্বকে চুলকানি, লালভাব বা দুর্গন্ধ এর লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে মাথার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি খুবই জরুরি।
খাদ্যাভ্যাসের ত্রুটি এবং পুষ্টির অভাব
বর্ষাকালে আমাদের খাদ্যাভ্যাস প্রায়ই বদলে যায়। গরম গরম পকোড়া, চা এবং বাইরের ভাজা খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। বিশেষ করে প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি১২-এর অভাব চুলের স্বাস্থ্যকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে। চুল একটি জীবন্ত টিস্যু, যাকে ভেতর থেকে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যখন শরীর সঠিক পুষ্টি পায় না, তখন প্রথম প্রভাব পড়ে চুলের উপর।
মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাবও বড় কারণ
বর্ষায় অনেকেই আবহাওয়ার কারণে খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের অভাব এবং মুড সুইং-এর শিকার হন। এই মানসিক পরিস্থিতিও চুলের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। মানসিক চাপের কারণে কর্টিসল-এর মতো হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা চুলের গ্রোথকে ব্যাহত করে এবং ঝরা শুরু হয়।
প্রতিরোধের জন্য এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করুন
- মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার করুন: সপ্তাহে অন্তত দুবার মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোবেন যাতে ঘাম, তেল এবং ময়লা জমা না হয়।
- ভেজা চুলে আঁচড় দেবেন না: ভেজা চুল সবচেয়ে দুর্বল থাকে, তাই শুকানোর পরে হালকা হাতে জট ছাড়ান।
- প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করুন: নারকেল তেল, আর্গান তেল বা বাদাম তেল দিয়ে মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন।
- প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান: ডাল, ডিম, পনির, সবুজ শাকসবজি, শুকনো ফল খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন।
- পরীক্ষা করান: যদি চুল ক্রমাগত ঝরতে থাকে তবে আয়রন, থাইরয়েড, ভিটামিন ডি এবং বি১২ পরীক্ষা করান।
বর্ষাকালে যা করবেন না
- চুল দীর্ঘক্ষণ ভেজা রাখবেন না।
- ভারী রাসায়নিক যুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না।
- হেয়ার ড্রায়ার এবং স্ট্রেইটনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন, এগুলো চুলের ক্ষতি করে।
- যুক্তি ছাড়া ঘরোয়া প্রতিকারের উপর নির্ভর করবেন না, কারণ প্রতিটি স্কিনের ধরন আলাদা।
বর্ষায় চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে এটি দীর্ঘ সময় ধরে চললে উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক তথ্য, সুষম খাদ্য এবং মাথার ত্বকের পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। ভয় না পেয়ে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং নিয়মিত আপনার চুলের যত্ন নিন। কারণ চুল যখন সুস্থ থাকে, তখন আত্মবিশ্বাসও ঝলমল করে।