নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য নতুন পরীক্ষা নিয়ম বই দেখে পরীক্ষার সুযোগ

নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য নতুন পরীক্ষা নিয়ম বই দেখে পরীক্ষার সুযোগ

২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) নবম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। নাম ‘ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট’ (Open-Book Assessment)। অর্থাৎ, এবার থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসে বই, নোট কিংবা রেফারেন্স মেটেরিয়াল সঙ্গে রেখে পরীক্ষা দিতে পারবে। এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে শুধু মুখস্থ নয়, বরং বোঝাপড়া ও প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া হবে।

কবে ও কেন? – পাইলট প্রকল্পের ইতিবাচক ফল

২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য CBSE-এর পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছিল ওপেন-বুক পরীক্ষার। ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল পরীক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেলেও শিক্ষকরা নতুন নিয়মকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বোর্ড জুনে নতুন নিয়ম অনুমোদন করেছে।

কীভাবে হবে পরীক্ষার আয়োজন?

প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের তিনটি টার্মে, ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে ওপেন-বুক পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে বসে সংশ্লিষ্ট বই, নোট ও অন্যান্য সহায়ক গ্রন্থ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে প্রশ্নপত্র এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে শুধুমাত্র তথ্য খুঁজে বের করা নয়, বরং সঠিক প্রয়োগ, বিশ্লেষণ ও যুক্তি প্রদর্শনের গুরুত্ব থাকবে।

জাতীয় শিক্ষানীতি ও নতুন পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য

এই নতুন উদ্যোগ জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০ এবং ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর স্কুল এডুকেশন (NCFSE) ২০২৩-এর মূল ভাবনার সঙ্গে খাপ খায়। শিক্ষার্থীদের শুধু মুখস্থ না করে বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতা বৃদ্ধি করাই এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য।

মুখস্থ পড়াশোনার বাইরেও দক্ষতা বৃদ্ধি

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করার উপর নির্ভরশীল। নতুন ওপেন-বুক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা তথ্য খোঁজার পাশাপাশি তা প্রয়োগ করার সক্ষমতা অর্জন করবে। এতে তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং জ্ঞান গভীর হবে।

শিক্ষক সমাজের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

পাইলট প্রকল্পের সময় শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে ওপেন-বুক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এই নতুন পদ্ধতি চাপ কমাবে এবং শিক্ষাকে আরও আনন্দদায়ক করবে। শিক্ষকদের মতে, এটি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষাবোধকে আরও গভীর ও প্রাসঙ্গিক করবে।

আগের OTBA প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা

২০১৪ সালে CBSE ‘ওপেন টেক্সট বেসড অ্যাসেসমেন্ট’ (OTBA) চালু করেছিল। তবে ২০১৭-১৮ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয় কারণ তখনকার প্রশ্নপত্র ও প্রস্তুতি শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাকে পর্যাপ্তভাবে উৎসাহিত করতে পারেনি। এবার নতুন কাঠামোতে নমুনা প্রশ্নপত্র তৈরির মাধ্যমে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।

নমুনা প্রশ্নপত্র ও কাঠামোর গুরুত্ব

নতুন নিয়মে CBSE মানসম্মত নমুনা প্রশ্নপত্র তৈরি করবে, যাতে প্রশ্নের মান বজায় থাকবে এবং শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি বাড়বে। যদিও সব স্কুলে বাধ্যতামূলক নয়, ইচ্ছুক স্কুলগুলো এই কাঠামোর অধীনে পরীক্ষা নিতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা চাপ কমানোর আশ্বাস

এই নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা কমাবে এবং পরীক্ষার চাপ কমিয়ে দেবে। শিক্ষার্থীরা বাস্তবমুখী শিক্ষায় উৎসাহিত হবে, যেখানে তথ্যের উপর ভিত্তি করে সমাধান খোঁজা ও যুক্তি প্রতিষ্ঠা প্রধান। ফলে সাফল্যের সঙ্গে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মাপকাঠিতে উন্নতি আসবে।

শিক্ষকদের ভূমিকা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি

শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতির সফল বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হতে হবে। শুধু তথ্য পাঠানো নয়, শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনা ও প্রয়োগমুখী শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা তাদের দায়িত্ব হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের প্রেরণা

ওপেন-বুক পরীক্ষার মাধ্যমে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন থেকে মুখস্থের বাইরেও বের হয়ে নিজেদের চিন্তাশক্তি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশ করবে। এতে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং উচ্চ শিক্ষায় সফলতার পথে এগোবে।CBSE-এর নবম শ্রেণির ওপেন-বুক অ্যাসেসমেন্ট নতুন শিক্ষানীতির ধারায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। মুখস্থ পড়াশোনা থেকে বের হয়ে বাস্তব জীবনের প্রয়োগমুখী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এটি শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নত করবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা এই পরিবর্তনের জন্য ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছেন, যা আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

Leave a comment