চাঁদপুর গ্রামের সেই পুরোনো বাড়ি: চার বন্ধুর সাহসিক অভিযান

চাঁদপুর গ্রামের সেই পুরোনো বাড়ি: চার বন্ধুর সাহসিক অভিযান

আজ থেকে অনেক দিন আগে, ‘চাঁদপুর’ নামের এক ছোট্ট গ্রামে একটা পুরোনো দিনের বিশাল বাড়ি ছিল। লোকেরা বলত সেখানে কেউ থাকে না, কিন্তু রাতের বেলা প্রায়ই অদ্ভুত সব আওয়াজ আসত – যেমন কেউ দরজা ধাক্কাচ্ছে, কারো কান্নার শব্দ, বা মাঝে মাঝে হাসির আওয়াজও শোনা যেত। গ্রামের লোকেরা দিনের বেলা ওই বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেও, সূর্য ডুবলেই সবাই ঐ রাস্তা এড়িয়ে চলত।

কিছু লোকের ধারণা ছিল যে কোনো এক কালে সেখানে এক ধনী জমিদার বাস করতেন, যিনি ছিলেন খুবই নিষ্ঠুর। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল এবং তারপর থেকেই সেখানে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে।

চার বন্ধুর পরিকল্পনা

গ্রামে চার বন্ধু থাকত – রাহুল, মণীশ, পিঙ্কি আর সোনু। তারা চারজন ছোটবেলা থেকেই একে অপরের খুব কাছের বন্ধু ছিল এবং সবসময় একসাথে থাকত। একদিন, গরমের ছুটিতে, যখন সবাই বেকার বসে ছিল, তখন তারা কিছু রোমাঞ্চ করার কথা ভাবল। রাহুল বলল, ‘আমরা কেন ঐ পুরোনো বাড়িটাতে এক রাত কাটাই না? তাহলে তো জানা যাবে সত্যিই ওখানে ভূত আছে নাকি এগুলো সব মিথ্যে গল্প।’ প্রথমে বাকি তিনজন একটু ভয় পেয়েছিল, কিন্তু পরে সবাই রাজি হয়ে গেল। ঠিক হল যে শনিবার রাতে তারা চারজন টর্চ, কম্বল আর কিছু খাবার নিয়ে ঐ বাড়িতে যাবে।

বাড়িতে প্রথম রাত

শনিবার রাতে চার বন্ধু চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল এবং বাড়িটিতে পৌঁছল। ভেতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই ঠান্ডা বাতাসের একটা ঝাপটা তাদের শরীরে এসে লাগল। বাড়িটা ছিল বিশাল বড় আর দেওয়ালগুলোতে মাকড়সার জাল ছড়িয়ে ছিল। একটি ঘর বেছে নেওয়া হল যেখানে তারা রাতটা কাটাবে। তারা টর্চ জ্বালিয়ে চারদিক দেখল – মেঝেতে ধুলো জমে আছে, পুরোনো ছবি দেওয়ালে টাঙানো, আর জানালাগুলো ভাঙা। রাত ১১টা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। তারা গল্প করছিল, মজা করছিল। কিন্তু তারপর...

অদ্ভুত ঘটনার শুরু

প্রায় ১২টা নাগাদ, হঠাৎ বাড়িতে কারো হাঁটার আওয়াজ পাওয়া গেল। মনে হল যেন কেউ কাঠের সিঁড়িতে পা রাখছে। চারজন চুপ হয়ে গেল। রাহুল আস্তে করে বলল, "হয়তো বেড়াল হবে..." কিন্তু মণীশ বলল, ‘ভাই, এটা তো মানুষের পায়ের আওয়াজ।’ কিছুক্ষণ পর, দরজাটা নিজে থেকেই জোরে বন্ধ হয়ে গেল। জানালার পাশে রাখা একটা ফুলের টব মাটিতে পড়ে ভেঙে গেল। পিঙ্কি ভয়ে সোনুর হাত ধরে বসে রইল।

পুরোনো আয়না আর অদ্ভুত মুখ

তারা সবাই তাড়াতাড়ি জানালার কাছে গেল এবং বাইরে দেখতে লাগল, কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না। তখনই রাহুলের চোখ পড়ল একটা পুরোনো আয়নার ওপর। সেই আয়নায় সে একটা অদ্ভুত মুখ দেখতে পেল – সাদা মুখ, লাল চোখ আর লম্বা চুল। সে চিৎকার করে সবাইকে ডাকল। যখন সবাই আয়নায় দেখল, তখন সেই মুখটা गायब হয়ে গেছে। সকলের গায়ে কাঁটা দিল। ভয় এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সবাই পালানোর কথা ভাবতে লাগল।

ভূতের সত্যি

ঠিক তখনই ঘরের দরজাটা নিজে থেকেই খুলে গেল এবং এক বৃদ্ধ মহিলার আওয়াজ শোনা গেল, ‘কেন এসেছিস আমার শান্তি নষ্ট করতে?’ চারজন ভয়ে মাটিতে বসে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে ভূতটা তাদের কোনো ক্ষতি করল না। সেই আত্মা বলল, ‘আমি এখানে গত ৫০ বছর ধরে আছি। এই বাড়িতেই আমাকে খুন করা হয়েছিল। আমি মানুষকে ঘৃণা করি না, কিন্তু আমার আত্মার মুক্তি হয়নি। আমি চাই কেউ আমার সত্যিটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরুক।’

আত্মার মুক্তি

চার বন্ধু সেই আত্মার কাছে প্রতিজ্ঞা করল যে তারা তার গল্প সবাইকে বলবে এবং মন্দিরের পুরোহিতের সাথে কথা বলবে। পরের দিন ভোরবেলায় তারা গ্রামে ফিরে গেল এবং পুরোহিত মশাইকে সব খুলে বলল। পুরোহিত সেই বাড়িতে हवन এবং পুজো করালেন এবং আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করলেন। কিছুদিন পর লোকেরা অনুভব করতে পারল যে বাড়িটা থেকে আর কোনো অদ্ভুত আওয়াজ আসছে না। মনে হতে লাগল যেন সেই আত্মা মুক্তি পেয়েছে।

শিক্ষা এবং নতুন শুরু

এই ঘটনার পর রাহুল, মণীশ, পিঙ্কি আর সোনুর জীবন বদলে গেল। তারা শিখল যে ভয় থেকে পালানোর চেয়ে যদি আমরা সত্যিের মুখোমুখি হই, তাহলে আমরা কারো সাহায্যও করতে পারি। গ্রামের লোকেরা এখন আর ওই বাড়িটাকে ভয় পায় না। সেখানে এখন একটা লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে, যেখানে বাচ্চারা এসে পড়াশোনা করে। আর সেই চার বন্ধু? তারা এখন গ্রামের হিরো হয়ে গেছে।

এই গল্প আমাদের শেখায় যে প্রত্যেক ভয়ের পেছনে কোনো না কোনো সত্যি লুকিয়ে থাকে। ভূত-প্রেতের গল্প শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং সেগুলো অতীতের अधूरा কথা প্রকাশ করে। যদি আমরা সাহস, বুদ্ধি এবং করুণা দিয়ে কাজ করি, তাহলে শুধু ভয়কেই জয় করা যায় না, বরং কারো আত্মাকে শান্তিও দেওয়া যায়। ভয় থেকে পালানো নয়, তার মোকাবিলা করাই হল असली বীরত্ব।

Leave a comment