ছঠ পূজায় ব্রতীরা ৩৬ ঘণ্টা নির্জলা উপবাস রেখে সূর্যদেব এবং ছঠি মাইয়ার আরাধনা করেন। তবে, অনেক সময় দুর্বলতা, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে এই ব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শাস্ত্র অনুসারে, এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ছঠি মাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং বিধান অনুযায়ী প্রায়শ্চিত্ত করলে ব্রতের দোষ দূর করা যায়।
ছঠ পূজা: ভারতে পালিত ছঠ পূজার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং দেশের অন্যান্য অংশে এই উৎসব অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও শৃঙ্খলার সাথে উদযাপিত হয়। রবিবার খরনার সাথে ব্রতীরা ৩৬ ঘণ্টার নির্জলা উপবাস শুরু করেছেন, যা উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়ার সাথে সম্পন্ন হবে। এই কঠোর তপস্যার সময় অনেক সময় স্বাস্থ্যগত কারণে ব্রত ভেঙে যায়, যার ফলে ব্রতীরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু ধর্মগ্রন্থগুলিতে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো কারণে ব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাহলে ছঠি মাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে সঠিক বিধান অনুযায়ী প্রায়শ্চিত্ত করলে দোষ দূর করা যায়।
৩৬ ঘণ্টার কঠিন ও পবিত্র ব্রত
ছঠ পূজায় ব্রতীরা ৩৬ ঘণ্টা নির্জলা অর্থাৎ জল ও খাবার ছাড়া উপবাস রাখেন। এই সময় ব্রতীরা মন, শরীর ও আত্মার শুদ্ধির জন্য তপস্যা করেন। পূজার এই সংকল্প কেবল শারীরিক সহনশীলতার পরীক্ষা নয়, বরং আত্মসংযম ও ভক্তির চরম দৃষ্টান্তও বটে।
ব্রতীরা এই সময় সূর্যদেব এবং ছঠি মাইয়ার কাছে পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি ও সন্তানদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। খরনার প্রসাদ গ্রহণের পর এই উপবাস শুরু হয়, যেখানে পরের দুই দিন কেবল পূজা ও অর্ঘ্যের সময়ই স্নান-ধ্যান এবং ভক্তিমূলক কাজ করা হয়।
কেন ভেঙে যায় ব্রত?
ছঠ পূজার সময় শরীরের উপর অতিরিক্ত শারীরিক চাপ পড়ে। দীর্ঘক্ষণ উপবাসী থাকার কারণে অনেক সময় মানুষের দুর্বলতা, মাথাব্যথা বা রক্তচাপের মতো সমস্যা দেখা দেয়। কখনও কখনও এই ব্রত বয়স্ক বা অসুস্থ ব্যক্তিদের দ্বারা অজান্তেই ভেঙে যায়।
এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ভয় থাকে যে ছঠি মাইয়া রুষ্ট না হন বা ব্রতের প্রভাব শেষ না হয়ে যায়। ধর্মশাস্ত্রগুলিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, যদি কোনো বাধ্যবাধকতা বা অসুস্থতার কারণে ব্রত ভেঙে যায়, তবে এটিকে ‘ভুলবশত খণ্ডিত ব্রত’ হিসাবে গণ্য করা হয়, যার দোষ প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে দূর করা যায়।

শাস্ত্র অনুযায়ী প্রায়শ্চিত্তের উপায়
যদি কোনো ব্রতীর ছঠ ব্রত কোনো কারণে অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, প্রথমে ব্রতীকে স্নান করে শুদ্ধ হতে হবে। এর পর শান্ত মনে ছঠি মাইয়ার সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
ব্রতীর মনে মনে বলা উচিত
হে ছঠি মাইয়া, আমার দ্বারা অজান্তেই ভুল হয়েছে, কৃপা করে আমাকে ক্ষমা করুন। আমি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে পুনরায় আপনার ব্রত পালনের সংকল্প নিচ্ছি।
এর পর পণ্ডিত বা জ্ঞানী ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে দান করা শুভ বলে মনে করা হয়। এই দান শস্য, বস্ত্র বা কোনো অভাবীকে খাবার দেওয়ার আকারে হতে পারে।
ছঠি মাইয়া রাগ করেন না, আশীর্বাদ দেন
ধর্মাচার্যদের মতে, ছঠি মাইয়া মায়েরই সমান। যেভাবে মা তার সন্তানদের ভুল ক্ষমা করে দেন, ঠিক সেভাবেই ছঠি মাইয়াও তার ভক্তদের অজান্ত ভুল ক্ষমা করে দেন।
যদি কোনো ব্রতীর ব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তাহলে তাদের আত্মগ্লানিতে ডুবে থাকা উচিত নয়, বরং পরের বার আরও বেশি শ্রদ্ধা সহকারে ব্রত পালনের সংকল্প নেওয়া উচিত।
শাস্ত্রগুলিতে এও বলা হয়েছে যে ব্রতের মূল ভাব ভক্তি ও নিষ্ঠার মধ্যে নিহিত। যদি অনুভূতি আন্তরিক হয়, তাহলে ভুলবশত হওয়া ত্রুটির প্রভাব শেষ হয়ে যায়।
দান এবং ক্ষমা প্রার্থনার গুরুত্ব
ব্রত ভেঙে যাওয়ার পরিস্থিতিতে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি দান করারও প্রথা রয়েছে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, দানের মাধ্যমে মনের দোষ দূর হয় এবং ব্রতীর শ্রদ্ধা পূর্ণতা লাভ করে।
পণ্ডিতরা বলেন যে, যদি কোনো কারণে ব্রতী ছঠ ব্রত সম্পূর্ণ করতে না পারেন, তবে পরের বছর পুনরায় ব্রত পালনের সংকল্প নেওয়া উচিত। এমনটা করলে পূর্বের ব্রতের দোষ শেষ হয়ে যায়।
সন্ধ্যা ও প্রাতঃকালীন অর্ঘ্যের গুরুত্ব
ছঠ পূজায় দুটি অর্ঘ্য দেওয়া হয় – সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং প্রাতঃকালীন অর্ঘ্য। সন্ধ্যা অর্ঘ্য অস্তগামী সূর্যকে দেওয়া হয়, আর প্রাতঃকালীন অর্ঘ্য উদীয়মান সূর্যকে। এই অর্ঘ্য কেবল পূজার অংশ নয়, বরং প্রকৃতি ও শক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রতীকও বটে।
এই ব্রতে জল, আলো এবং ভক্তি – এই তিনটির মিলন ঘটে। এই কারণেই এটিকে সবচেয়ে কঠিন এবং পবিত্র ব্রতগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়।
ছঠ পূজার সময় সতর্কতা
ব্রতীদের ছঠ পূজার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শরীর দুর্বল হলে অর্ঘ্য বা ঘাটের পূজা কোনো নিকটাত্মীয়ের সাহায্যে করুন। যদি স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে প্রভাবিত হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ছঠ পূজার উদ্দেশ্য তপস্যার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের কল্যাণের অনুভূতিকে শক্তিশালী করা, শরীরের ক্ষতি করা নয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রতের অনুভূতিই সর্বশ্রেষ্ঠ
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রতের অর্থ কেবল উপবাস নয়, বরং মনের শুদ্ধি ও সংযম। যদি কোনো অজান্ত কারণে ব্রত ভেঙে যায়, তাহলে এটি ধরে নেওয়া হয় যে ব্রতীর উদ্দেশ্য এবং ভক্তিই গুরুত্বপূর্ণ। ছঠি মাইয়ার কৃপা আন্তরিক মন নিয়ে প্রার্থনা করা ব্যক্তিদের উপর সর্বদা বজায় থাকে।












