সুপ্রিম কোর্ট সিজেআই বিআর গাভাইয়ের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারা আইনজীবী কিশোরের বিরুদ্ধে অবমাননার পদক্ষেপ নেয়নি। সিজেআই নিজে হস্তক্ষেপ করে বিষয়টি বাড়ানো থেকে বিরত রেখেছেন। এসসিবিএ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিল, কিন্তু আদালত তা স্থগিত রেখেছে।
নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই (সিজেআই)-এর দিকে জুতো ছুঁড়ে মারা আইনজীবী কিশোরের বিরুদ্ধে অবমাননার পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছে। মামলার শুনানিতে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, আদালতে কোনো ব্যক্তির দ্বারা স্লোগান দেওয়া বা জুতো ছোঁড়া অবমাননার মধ্যে পড়ে, কিন্তু পদক্ষেপ নেওয়া সংশ্লিষ্ট বিচারকের উপর নির্ভর করে। আদালত আরও বলেছে যে, নোটিশ জারি করলে আইনজীবীকে অকারণে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তাই মামলাটিকে নিজে থেকেই শেষ হতে দেওয়া ভালো।
সিজেআই-এর প্রতিক্রিয়া
প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই নিজে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে আইনজীবীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট মনে করেছে যে, যদিও এই কাজটি গুরুতর এবং ফৌজদারি অবমাননার আওতায় পড়ে, বিচারক তাঁর উদারতা দেখিয়ে মামলাটিকে বাড়ানো থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালত বলেছে যে, আইনজীবীকে নোটিশ জারির বিকল্পটি গ্রহণ করা হবে না যাতে তিনি সমাজে এবং গণমাধ্যমে অকারণে গুরুত্ব না পান।
এসসিবিএ-এর যুক্তি
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) এই ঘটনার মহিমান্বিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে অবমাননার পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিল। এসসিবিএ-এর সভাপতি বিকাশ সিং বলেছেন যে, ঘটনাটিকে উপেক্ষা করা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি ভুল বার্তা দেবে। তিনি জানিয়েছেন যে, আইনজীবী কিশোরকে ঘটনার পরপরই আটক করা হয়েছিল এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর কিশোর দাবি করেছে যে, সে ঈশ্বরের আদেশে এই কাজটি করেছে এবং ভবিষ্যতে এটি পুনরাবৃত্তি করার হুমকিও দিয়েছে।

এসসিবিএ জোর দিয়ে বলেছে যে, যদি আদালত নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে এটি বিচারিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। সিং বলেছেন যে, আইনজীবীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে লোকেরা এই ঘটনাটিকে উপহাস করতে পারে। তিনি আদালতকে অনুরোধ করেছেন যে, নোটিশ জারি করা হোক বা অন্য কোনো উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চের সিদ্ধান্ত
তবে, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ পরিস্থিতিকে আরও বাড়াতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেছেন যে, এই কাজটি গুরুতর এবং চরম ফৌজদারি অবমাননা, কিন্তু যেহেতু সিজেআই নিজে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই আইনজীবীকে আর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সলি Solicitor জেনারেল তুষার মেহতাও বলেছেন যে, নোটিশ জারি করলে সামাজিক মাধ্যমে আইনজীবীর আলোচনা বাড়তে পারে এবং সে নিজেকে ভুক্তভোগী বা নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। বিচারপতি বাগচী পরামর্শ দিয়েছেন যে, অবমাননা সম্পর্কিত বিষয়ে পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট বিচারকের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।
বেঞ্চ উপসংহারে পৌঁছেছে যে, মামলাটিকে স্থগিত রেখে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর বিবেচনা করা হোক। আদালত সংশ্লিষ্ট রিট আবেদনগুলিকে “শুনানির অযোগ্য” বলে খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেছেন যে, এক সপ্তাহ পর এই বিষয়ে বিবেচনা করা হবে এবং আদালত এটিকে সিজেআই যে উদারতা দেখিয়েছেন, সেই একই উদারতার সাথে দেখবে।
ঘটনার বিবরণ
এই পুরো বিতর্কটি ৬ অক্টোবর সামনে আসে, যখন আইনজীবী কিশোর সিজেআই গাভাই এবং বিচারপতি বিনোদ চন্দ্রনের মঞ্চের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (বিসিআই) ইতিমধ্যেই কিশোরের আইন অনুশীলন করার লাইসেন্স স্থগিত করে দিয়েছে।
কিশোরের ক্ষোভ সিজেআই-এর কিছু সাম্প্রতিক মন্তব্যের সাথে জড়িত ছিল। একটি মন্তব্য খাজুরাহোতে ভাঙা মূর্তি সম্পর্কিত একটি আবেদন প্রসঙ্গে ছিল, যেখানে সিজেআই আবেদনকারীকে বলেছিলেন, “যাও এবং দেবতার কাছে জিজ্ঞাসা করো।” দ্বিতীয় মন্তব্যটি মরিশাসে করা হয়েছিল, যা ভারতে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙার সমালোচনার সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই মন্তব্যগুলির পরে কিশোর তাঁর প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই কাজটি করেন।












