বিতর্কিত বিল: জেলে গেলেই মুখ্যমন্ত্রীর পদচ্যুতি? লোকসভায় বিরোধীদের হট্টগোলের হুঁশিয়ারি

বিতর্কিত বিল: জেলে গেলেই মুখ্যমন্ত্রীর পদচ্যুতি? লোকসভায় বিরোধীদের হট্টগোলের হুঁশিয়ারি

আজ লোকসভায় কেন্দ্র সরকার তিনটি বড় বিল পেশ করবে। এর মধ্যে বিতর্কিত বিলও রয়েছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী ৩০ দিন জেলে থাকলে পদ থেকে সরানোর বিধান আছে। বিরোধীরা এটি আটকানোর ঘোষণা করেছে।

নয়া দিল্লি: লোকসভার বাদল অধিবেশনে আজ বড় হট্টগোলের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্র সরকার তিনটি বিতর্কিত বিল পেশ করতে চলেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেই প্রস্তাবিত বিধানটি নিয়ে যেখানে কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী একটানা ৩০ দিন জেলে থাকলে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই বিধানের তীব্র বিরোধিতা করেছে বিরোধীরা এবং স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে তারা এই বিল পেশ হতে দেবে না।

বিরোধীদের ঘোষণা, 'বিল ছিঁড়ে দেব, টেবিল ভেঙে দেব'

অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই বিরোধী সাংসদরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক সাংসদ বলেছেন যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যখন এই বিল পেশ করবেন, তখন বিরোধীরা প্রবল বিরোধিতা করবে। সাংসদ বলেন, "আমরা এটা পেশ হতেও দেব না। আমরা টেবিল ভেঙে দেব এবং বিল ছিঁড়ে দেব।" বিরোধীদের বক্তব্য, এই বিল গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর সরাসরি আঘাত।

কোন কোন বিল লোকসভায় পেশ হবে

আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বড় বিল পেশ করবেন। সেগুলি হল –

  1. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধন) বিল ২০২৫।
  2. সংবিধান (১৩০তম সংশোধন) বিল ২০২৫।
  3. জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল ২০২৫।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিলগুলি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (JPC) পাঠানোর প্রস্তাবও রাখবেন।

আসলে বিতর্কের কারণ কী

সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সেই বিধানটি নিয়ে যেখানে বলা হয়েছে যে কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী যদি এমন কোনও অপরাধে গ্রেপ্তার হন যার সাজা পাঁচ বছর বা তার বেশি এবং তিনি একটানা ৩০ দিন ধরে পুলিশ হেফাজতে থাকেন, তাহলে ৩১তম দিনে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পদ থেকে অপসারিত হবেন।

বিরোধীদের অভিযোগ – 'স্বেচ্ছাচারী গ্রেফতারির রাস্তা খুলবে'

বিরোধীদের বক্তব্য, এই আইন বিরোধী সরকারগুলোকে অস্থির করার একটা উপায় হবে। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্র সরকার পক্ষপাতদুষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করিয়ে তাঁদের পদ থেকে সরানোর হাতিয়ার তৈরি করবে। কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি এক্স (Twitter)-এ লিখেছেন –

"বিরোধীদের অস্থির করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তারের জন্য লাগিয়ে দেওয়া। নির্বাচনী ময়দানে হারাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তারির মাধ্যমে তাঁদের পদ থেকে সরাতে চাইছে।"

দিল্লি ও তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গ

আসলে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তামিলনাড়ুর মন্ত্রী ভি. সেন্থিল বালাজির গ্রেপ্তারের পর এই প্রশ্ন উঠেছিল যে জেলে থাকাকালীন মন্ত্রী পদে বহাল থাকা কি সঠিক? সরকারের যুক্তি হল এই পরিস্থিতিতে একটি স্পষ্ট আইনের প্রয়োজন, যাতে জনগণের আস্থা বজায় থাকে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা যায়।

বিলে কী বিধান আছে

নতুন বিলে স্পষ্ট বলা হয়েছে –

"যদি কোনও প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রী একটানা ৩০ দিন জেলে থাকেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ বছর বা তার বেশি সাজার অপরাধের অভিযোগ থাকে, তাহলে ৩১তম দিনে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেবেন।"

বিরোধী সাংসদদের রণনীতি

বিরোধী দলগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা এই বিল সংসদে পাশ হতে দেবে না। এক সাংসদ মিডিয়াকে বলেছেন – "আমরা এই বিল পাশ হতে দেব না। এটা গণতন্ত্রের উপর হামলা। আমরা সংসদে প্রতিটি স্তরে এর বিরোধিতা করব।" বিরোধীদের স্পষ্ট ইঙ্গিত, অমিত শাহ এই বিল লোকসভায় পেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধী সাংসদরা স্লোগান ও হট্টগোলের মাধ্যমে অধিবেশন ভন্ডুল করবেন।

সংসদে সংঘাত অনিবার্য

সরকারের দাবি, এই বিলগুলো দুর্নীতি ও অপরাধমূলক রাজনীতি বন্ধ করার জন্য আনা হচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধীদের বক্তব্য, এটা সরাসরি বিরোধী নেতাদের নিশানা করার চেষ্টা। দুই পক্ষের এই সংঘাতের কারণে আজকের অধিবেশন খুবই হট্টগোলপূর্ণ হতে চলেছে।

Leave a comment