ভারতে ক্রিপ্টো লগ্নির হুড়োহুড়ি অগ্রণী ভূমিকায় দেশের অতি-ধনীরা

ভারতে ক্রিপ্টো লগ্নির হুড়োহুড়ি অগ্রণী ভূমিকায় দেশের অতি-ধনীরা

সঞ্চয়ের ঠিকানা বদলে গেল!

রোজগার বাড়ুক বা না বাড়ুক, সঞ্চয়ের চিন্তা ঘোরে সবার মাথায়। কিন্তু সেই সঞ্চয় রাখার জন্য উপযুক্ত জায়গা বাছা যেন এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জ। ব্যাঙ্কে রাখলে সুদের হার হাতেগোনা, শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডে ওঠাপড়ার ভয়, সোনায় লগ্নিতে পুরনো নিয়মকানুনের বোঝা। ফলে প্রথাগত বিনিয়োগ পথগুলি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটার মনস্থ করেছেন দেশের উচ্চবিত্ত সমাজের প্রতিনিধিরা।

হাই-নেটওয়ার্থ ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ক্রিপ্টো!

দেশের হাই-নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজ্যুয়াল (HNIs), ফ্যামিলি অফিস এবং ইনস্টিটিউশনাল লগ্নিকারীরা এখন ক্রিপ্টোকারেন্সির দিকেই ঝুঁকছেন। বিশেষ করে বয়সে কম, ৪০-এর নিচে থাকা যুব লগ্নিকারীরা চাইছেন তাঁদের পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া আনতে। সরকারি স্বীকৃতি নেই জেনেও, ডাইভার্সিফিকেশন ও উচ্চ রিটার্নের আশায় তাঁরা বিনিয়োগ করছেন বিটকয়েন, এথেরিয়াম, সোলানা-সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ডিজিটাল সম্পত্তিতে।

ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের তথ্যেই মিলছে স্পষ্ট ইঙ্গিত

ভারতের জনপ্রিয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কয়েনস্যুইচ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অতুল অহলুওয়ালিয়া জানান, বিগত কয়েক বছরে ধনীদের বিনিয়োগ অভ্যাসে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। তাঁরা এখন একাধিক ধরনের ক্রিপ্টো অ্যাসেটকে নিজেদের পোর্টফোলিওতে জায়গা দিচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন রকমের ডিজিটাল কয়েনেও অ্যালোকেশান করছেন পরিকল্পনা করে। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, ক্রিপ্টোতে সম্ভাবনার গন্ধ পাচ্ছেন তাঁরা।

আইনি স্বীকৃতি নয়, লাভের কৌশলেই মনোযোগ

ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা নিয়ে এক সময় বিস্তর চর্চা ছিল। তবে সাম্প্রতিক কালে সেই আলোচনার গুরুত্ব কমেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বদলের পর বিশ্বজুড়ে নীতি-ভিত্তিক অনিশ্চয়তা কিছুটা প্রশমিত। এর প্রভাব পড়েছে ভারতেও। এখন অধিকাংশ HNI চিন্তা করছেন—কোন ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করলে লাভ বেশি হবে, কতটা সময় ধরে রাখতে হবে, এবং কীভাবে অ্যালোকেশান করলে রিটার্ন সর্বাধিক পাওয়া যাবে।

হাতেগোনা কয়েক হাজার ধনীর দখলে অর্ধেক লগ্নি

ভারতের অন্যতম ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ‘কয়েনডিসিএক্স’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুমিত গুপ্তার দাবি আরও চমকপ্রদ। তাঁর কথায়, তাঁদের প্ল্যাটফর্মে থাকা মোট বিনিয়োগের প্রায় ৫০ শতাংশই এসেছে মাত্র ৩,৫০০ জন অতি ধনী ভারতীয়র হাত ধরে। এর থেকেই বোঝা যায়, এই অভিজাত শ্রেণির ভিতর ক্রিপ্টোর চাহিদা কতটা তীব্র। অধিকাংশ বিনিয়োগকারী যদিও ক্ষণস্থায়ী ওঠানামা থেকে লাভ তোলার দিকে নজর রাখছেন, তবুও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলেও আগ্রহ বাড়ছে।

শুধু ক্রিপ্টো নয়, ব্লকচেন ও ডিফাইও তাঁদের নজরে

যারা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করছেন, তাঁদের অনেকেই আরও এগিয়ে গিয়ে ব্লকচেন প্রযুক্তি এবং ডিসেন্ট্রালাইজ়ড ফিনান্স (DeFi)-এ পা রাখছেন। তাঁদের মতে, আগামী দিনের আর্থিক পরিকাঠামো গঠনের মূলে থাকবে এই প্রযুক্তিগুলিই। লগ্নির ক্ষেত্রেও এগুলির রিটার্ন পোটেনশিয়াল যথেষ্ট উজ্জ্বল বলে মনে করছেন তারা।

বিশ্বস্ত ক্রিপ্টো অ্যাসেটে সর্বাধিক আগ্রহ

এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতের অতি ধনী বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিটকয়েন, এথেরিয়াম, সোলানা এবং অন্যান্য ‘কি-লেয়ার-ওয়ান’ ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি। কারণ, এই কয়েনগুলির গ্রাহকভিত্তি বৃহৎ, লিকুইডিটি বেশি এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকেও এগুলি পরিণত। ফলে ভবিষ্যতের দিক বিবেচনা করেও এগুলিতে লগ্নি করছেন তাঁরা।

ভবিষ্যতের দিশা দেখাচ্ছে ক্রিপ্টো লগ্নি

চিরাচরিত লগ্নির রাস্তায় হাঁটা থেকে সরে এসে ভারতের উচ্চবিত্ত সমাজ ক্রিপ্টো ও আধুনিক ফিনটেক ভিত্তিক প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে—এটাই এখন বাস্তব। ক্রিপ্টো আইনি স্বীকৃতি পাক বা না পাক, HNI সমাজ বুঝে গিয়েছে—পোর্টফোলিওতে ডায়নামিকতা আনতে এবং বৈশ্বিক সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এই ডিজিটাল অ্যাসেটগুলি ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি হতে চলেছে।

Leave a comment