দেরাদুনে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলকে ৮৫ লক্ষ টাকার সাইবার প্রতারণা করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, প্রতারকরা কর্নেলকে ক্যান্সার এবং অবসাদের মতো গুরুতর রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিরল ভেষজ বীজের কেনাবেচার ফাঁদ পেতেছিল।
সাইবার ক্রাইম: দেরাদুন থেকে একটি চাঞ্চল্যকর সাইবার প্রতারণার ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সুরজিৎ সিংকে বিরল ভেষজ বীজের নামে ৮৫ লক্ষ টাকার প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই প্রতারণা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মতো মনে হচ্ছে, যেখানে এক বিদেশী মহিলা, একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ম্যানেজার এবং এক ভুয়া কৃষক জড়িত। বিষয়টি এখন সাইবার থানার তদন্তের অধীনে রয়েছে।
সারা ওয়াল্টারের ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর
পুরো ঘটনার সূত্রপাত হয় ১২ জুন, যখন ফেসবুকে নিজেকে ইউক্রেনের বাসিন্দা দাবি করে সারা ওয়াল্টার নামের এক মহিলা কর্নেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সারা জানান, তিনি ব্রিস্টল, ইউকের রয়্যাল ইনফার্মারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত। কথাবার্তার পরে সারা একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেন— বিরল ভেষজ বীজের কেনাবেচা, যা ক্যান্সার, অবসাদ এবং অন্যান্য গুরুতর রোগের ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
ভুয়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং বড় মুনাফার লোভ
সারা কর্নেলকে এলিজাবেথ ফ্র্যাঙ্ক নামের একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি নিজেকে অ্যাবট ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ক্রয় ব্যবস্থাপক (প্রোকিউরমেন্ট ম্যানেজার) হিসাবে পরিচয় দেন। তিনি বীজ কেনাবেচার একটি মডেল শেয়ার করেন, যেখানে জানানো হয় যে ভারত থেকে বীজ কিনে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা হবে এবং কর্নেল বড় ধরনের মুনাফা অর্জন করবেন।
বীজগুলির দাম প্রতি প্যাকেটের জন্য ৮১,০০০ টাকা বলা হয়, যা কোম্পানিকে প্রায় ১.৬ লক্ষ টাকায় (২০০০ ডলার) বিক্রি করার কথা ছিল। প্রথম অর্ডারে ১০০ প্যাকেটের ডিল হয়, অর্থাৎ মোট লেনদেন প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
অরুণাচলের ‘কৃষক’ সোনম থাপার নাম সামনে আসে
কোম্পানি বীজের সরবরাহের জন্য এক ভারতীয় কৃষক সোনম থাপার নাম দেয়, যিনি অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দা বলে পরিচিত। কর্নেলকে সরাসরি তাকে অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ১২ থেকে ২৯ জুনের মধ্যে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিস্তিতে মোট ৮৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করেন। প্রথমে বিশ্বাস অর্জনের জন্য কিছু ইমেল এবং ইনভয়েসও পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে না বীজ পাওয়া গেছে, আর না চালান।
যখন কর্নেল স্থানীয়ভাবে সোনম থাপার পরিচয় এবং তথ্য জানার চেষ্টা করেন, তখন জানা যায় যে এমন কোনও কৃষক বাস্তবে নেই। তার নাম, আধার এবং ব্যাংক ডিটেইলস সবই ভুয়া ছিল।
প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে কর্নেল দ্রুত সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ দ্রুত তদন্তের পর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইটি অ্যাক্ট এবং প্রতারণার ধারায় মামলা রুজু করেছে। পুলিশের ধারণা, এই ঘটনাটি একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক সাইবার গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, কারণ এতে বিদেশি পরিচয়, ভুয়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ব্যবহার করা হয়েছে।