দিল্লিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আইটিও, ধৌলা কুঁয়া, প্যাটেল নগর, রোহিনী সহ একাধিক এলাকায় জল জমার কারণে যানবাহন খুব ধীর গতিতে চলছে। দিল্লি-মেরঠ এক্সপ্রেসওয়েতে অক্ষরধাম সেতুর কাছে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে যাত্রীদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এত ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে, যেন যানজট এক মহামারীর আকার নিয়েছে।
সকালের ব্যস্ত সময়ে স্কুল ও অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষজন এই বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় জলমগ্নতা ও যানজটের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, মহড়া এবং বাস্তব পরিস্থিতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
আতিশীর আক্রমণ
দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং আপ নেতা আতিশী কমলা নগর মার্কেটের রাস্তায় জমে থাকা জলের একটি ভাইরাল ভিডিও X (পূর্বে টুইটার) এ শেয়ার করে সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, "10 মিনিটের বৃষ্টিতে কমলা নগরের এই অবস্থা! এটাই হল 4 ইঞ্জিনের সরকারের কামাল!"
তিনি মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা এবং পিডব্লিউডি মন্ত্রী পরবেশ ভার্মাকে ট্যাগ করে প্রশ্ন করেছেন— "কোথায় মুখ্যমন্ত্রী জি, কোথায় পিডব্লিউডি মন্ত্রী জি?"—যার ফলে দিল্লির বর্ষা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা নিয়ে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা ও বায়ু দূষণের অবস্থা
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) এর মতে, গত 24 ঘন্টায় দিল্লিতে 8 মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 26.8°C রেকর্ড করা হয়েছে, যা গড় তাপমাত্রার থেকে 0.5°C কম। দফতর আগামী 24-48 ঘন্টায় মাঝারি বৃষ্টিপাত ও মেঘলা আকাশ থাকার সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় 30°C থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃষ্টির কারণে বায়ু দূষণ কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (CPCB) তথ্য অনুসারে, সকাল 9টায় দিল্লির AQI 87 রেকর্ড করা হয়েছে, যা 'সন্তোষজনক' পর্যায়ে রয়েছে। CPCB-এর নিয়ম অনুযায়ী, AQI 51-100 এর মধ্যে থাকলে 'সন্তোষজনক' হিসেবে ধরা হয়, যেখানে 0-50 'ভাল' এবং 101-200 'মাঝারি' পর্যায়ে ধরা হয়।
সরকারের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন
যেখানে দিল্লিবাসী জলমগ্নতা ও যানজটে জর্জরিত, সেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আতিশীর আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রশাসনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। মানুষ জানতে চায়, গত দু'দিনের টানা বৃষ্টির জন্য কেন আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি এবং কেন প্রতি বছর বর্ষাকালে দিল্লির এই দুর্দশা ফিরে আসে।
এখন দেখার বিষয়, দিল্লি সরকার আর কতদিন অপেক্ষা করে— ততদিন পর্যন্ত জনগণ রাস্তায় জলমগ্ন হয়েই দুর্ভোগ পোহাতে থাকবে।