দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশী' বলায় বিতর্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ এবং বিজেপির পাল্টা আক্রমণ

দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশী' বলায় বিতর্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ এবং বিজেপির পাল্টা আক্রমণ
সর্বশেষ আপডেট: 4 ঘণ্টা আগে

দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিতে বাংলাকে 'বাংলাদেশী' বলায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এটিকে সংবিধানের অপমান বলেছেন। বিজেপি মমতার এই বক্তব্যকে উস্কানিমূলক বলেছে এবং এনএসএ জারির দাবি জানিয়েছে। এই বিতর্ক ভাষাগত ও রাজনৈতিক আলোচনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

Mamta Banerjee: দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে একটি বিতর্ক জন্ম নিয়েছে যা ভাষাগত পরিচয়, সাংবিধানিক মর্যাদা এবং রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগকে একইসঙ্গে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। দিল্লি পুলিশের একটি कथित চিঠিতে বাংলা ভাষাকে 'বাংলাদেশী' বলার কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তিনি এটিকে কেবল অসাংবিধানিক নয়, রাষ্ট্র-বিরোধীও বলেছেন। অন্যদিকে, বিজেপি এই বক্তব্যকে "উস্কানিমূলক" বলে পাল্টা আক্রমণ করেছে এবং মমতার বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন (NSA) এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

দিল্লি পুলিশের চিঠি থেকে বিতর্কের সূত্রপাত

বিতর্কের শুরু তখন হয় যখন দিল্লি পুলিশের একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে, যেখানে कथितভাবে 'বাংলাদেশী ভাষা'র উল্লেখ করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে সরাসরি বাংলা ভাষার অপমান মনে করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি এক্স (পূর্বে টুইটার) এ দিল্লি পুলিশের সেই চিঠিটি শেয়ার করে লিখেছেন, 'এটা কত লজ্জার যে বাংলার মতো সমৃদ্ধ ভাষাকে বাংলাদেশী বলে অপমান করা হয়েছে।'

মমতার ক্ষোভ: ভাষার উপর আঘাত, সংবিধানের উপর আঘাত

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবৃতি জারি করে বলেছেন যে, 'বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এবং স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ এবং জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’ এর শিকড় এই ভাষাতেই নিহিত। একে ‘বাংলাদেশী’ বলা কেবল সংবিধানের অপমান নয়, দেশের একতার উপর হামলা।' তিনি আরও জিজ্ঞাসা করেছেন যে এখন কি ভারতে ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেবে? এটা কি সংবিধানে স্বীকৃত ভাষার অপমান নয়?

বিজেপির পাল্টা আক্রমণ: মমতার বক্তব্য উস্কানিমূলক

ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বিপজ্জনক' আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে তাঁর উদ্দেশ্য কেবল রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে দিল্লি পুলিশ কখনও বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশী বলেনি, বরং প্রসঙ্গটি ছিল কেবল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা। মালব্য বলেছেন, 'দিল্লি পুলিশ কিছু অঞ্চলে ব্যবহৃত বিশেষ উপভাষাগুলির উল্লেখ করেছে, যেমন সিলেটি, যা বাংলাদেশে বলা হয় এবং ভারতীয় বাংলা থেকে আলাদা। এটি একটি কৌশলগত বিবরণ, ভাষাগত মন্তব্য নয়।'

এনএসএ জারির দাবি

অমিত মালব্য আরও একধাপ এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সুরক্ষা আইন (NSA) এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ভাষাগত ও সামাজিক উত্তেজনা বাড়তে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

সিপিআই(এম)-ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে

এই বিষয়ে কংগ্রেস এবং বামেরাও পিছিয়ে নেই। সিপিআই(এম)-এর वरिष्ठ नेता মহম্মদ সেলিম দিল্লি পুলিশের ভাষার জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি টুইট করেছেন, 'দিল্লি পুলিশ কি সংবিধানের অষ্টম তফসিলের জ্ঞান রাখে না? বাংলা ভাষা তাতে স্বীকৃত। ‘বাংলাদেশী ভাষা’ নামে কোনো শব্দ আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে নেই।' সেলিম দিল্লি পুলিশকে ‘অশিক্ষিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা’ পর্যন্ত বলেছেন এবং দাবি করেছেন যে এই চিঠির জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

রাজনৈতিক ভূমিকম্প নাকি প্রশাসনিক ভুল?

এই বিতর্ক অনেক স্তরেই গুরুতর হয়ে উঠেছে। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে বাঙালি জাতিসত্তার मुद्दा হিসাবে তুলে ধরছেন, অন্যদিকে বিজেপি এটিকে ‘সুরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাখ্যা’ বলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে এটি কি কেবল প্রশাসনিক শব্দের ভুল নাকি এর পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে? বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাষাগত পরিচয় ভারতের মতো বহুভাষিক দেশে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, বিশেষ করে যখন কোনো সাংবিধানিক ভাষার কথা আসে।

Leave a comment