কলকাতায় ডেঙ্গির থাবা ফের তরুণের মৃত্যু আতঙ্ক বাড়ছে শহরে

কলকাতায় ডেঙ্গির থাবা ফের তরুণের মৃত্যু আতঙ্ক বাড়ছে শহরে

নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: মহানগরে ফের ডেঙ্গির বলি এক তরুণ। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই অকালে প্রাণ হারাতে হলো কলকাতার অরিজিত দাসকে। একদিনের অসুস্থতার পর তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে। কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মৃত্যু কেড়ে নিল এই তরুণের জীবন। শহরে ডেঙ্গির এই নতুন মৃত্যুর ঘটনা ফের আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

একদিনেই শেষ হয়ে গেল জীবন

অরিজিত দাসের বয়স মাত্র ২৬। সুস্থ তরুণের এমন অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও পরিচিত মহলে। একদিন আগেই জ্বর ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ডেঙ্গির আক্রমণ সামলাতে পারেননি তিনি। পরিবার এখন স্তব্ধ, হঠাৎ এই মৃত্যুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না কেউই।

হাসপাতালের রিপোর্টে ডেঙ্গির ছাপ

চিকিৎসক সূত্রে জানা গিয়েছে, অরিজিত দাসের শরীরে ডেঙ্গির ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। কলকাতা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনে তাঁকে ভর্তি করার পরপরই চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু রক্তপ্লেটলেট দ্রুত নেমে যাওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রিপোর্টে স্পষ্টভাবে ডেঙ্গি সংক্রমণের কথাই উঠে এসেছে।

জুন মাসেও প্রাণ কেড়েছিল ডেঙ্গি

এটা কিন্তু এ বছরের প্রথম মৃত্যু নয়। এর আগে জুন মাসে দমদমের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সারণী ব্যানার্জীর মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গিতে। মাত্র ১৩ বছর বয়সী সারণী বৈদ্যনাথ গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী ছিল। দীর্ঘ পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সে শেষ পর্যন্ত হার মানে। সেদিনের ঘটনা এলাকায় গভীর চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল, এবার তরুণের মৃত্যু শহরে ফের ডেঙ্গির আতঙ্ক বাড়িয়ে দিল।

মহানগরে ডেঙ্গি আতঙ্ক

কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই ডেঙ্গির প্রভাব বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ বছর জুন-জুলাই থেকেই ডেঙ্গির সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের হাসপাতালগুলিতে প্রতিদিন একাধিক ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি দুই হাসপাতালেই ভিড় বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাবের প্রধান সময়। ফলে আগামী দিনগুলো আরও চিন্তার।

প্রশাসনের উদ্যোগে জোরালো প্রশ্ন

প্রতিবারই ডেঙ্গি মৌসুমে শহর জুড়ে ফগিং, নালা পরিষ্কার ও সচেতনতামূলক প্রচারের দাবি ওঠে। কিন্তু বাস্তবে কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। অরিজিতের মতো তরুণের মৃত্যু আবারও প্রমাণ করছে, এখনও শহরে ডেঙ্গি রোধে ফাঁক রয়ে গিয়েছে। নাগরিকদের একাংশের মতে, প্রশাসনের উদ্যোগে আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

পরিবারের শোক ও ক্ষোভ

মৃত তরুণের পরিবার এখন ভেঙে পড়েছেন। মাত্র একদিন আগে যিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁকে হারাতে হবে, তা কেউ কল্পনাও করেননি। পরিবারের এক সদস্যের বক্তব্য, “ডেঙ্গি হলে মানুষ বাঁচতে পারবে না? এত বড় বড় হাসপাতাল, এত চিকিৎসক – তবুও কি আমরা সুরক্ষিত নই?” ক্ষোভ ও অসহায়তার সুর মিলেছে তাঁদের কণ্ঠে।

শহরে স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রয়োজন

ডেঙ্গি প্রতিরোধে চিকিৎসকদের বার্তা, সচেতনতার বিকল্প নেই। বাড়ির আশপাশে জল জমতে দেওয়া চলবে না, জমা জলে মশার লার্ভা জন্মায়। নিয়মিত কেরোসিন ছড়ানো, মশারি ব্যবহার ও শরীরের সামান্য জ্বরকেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হতে পারে।

কলকাতা জুড়ে আতঙ্কের আবহ

একদিকে বর্ষার বৃষ্টিতে শহরের নালা-ড্রেনে জল জমে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে মৃত্যুর খবর মানুষকে নতুন করে চিন্তায় ফেলছে। হাসপাতালগুলিতে রোগীর ভিড়, পাশাপাশি মৃত্যুর খবর কলকাতার সাধারণ নাগরিকদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। অনেকেই আবার মাস্কের সঙ্গে মশারি ও রেপেলেন্ট ব্যবহার শুরু করেছেন প্রতিদিনের জীবনে।

লড়াই এখনও বাকি

অরিজিত দাসের মৃত্যু কলকাতাকে আবার মনে করিয়ে দিল – ডেঙ্গি আজও অপ্রতিরোধ্য এক শত্রু। প্রতিবছর মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর চেষ্টা হলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপের সঙ্গে নাগরিক সচেতনতা মেলালে তবেই এই মরণব্যাধিকে রুখে দেওয়া সম্ভব। তবে তার আগে আরও কত প্রাণ হারাতে হবে, সেই প্রশ্নই এখন শহরের আকাশে ভাসছে।

Leave a comment