ডিমের দুই রূপে বিভ্রান্তি : ডিমে কুসুম আর সাদা অংশ – দুটোতেই লুকিয়ে আছে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টি উপাদান। অনেকে মনে করেন কুসুম খাওয়াই ক্ষতিকর, কারণ এতে কোলেস্টেরল বেশি। আবার অনেকে শুধু সাদা অংশকেই শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, কার শরীর কেমন এবং তার শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী ডিমের কোন অংশ খাবেন, সেটাই আসল বিষয়।
সাদা অংশের বিশেষত্ব
ডিমের সাদা অংশে ক্যালোরি অত্যন্ত কম। ফলে যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাঁদের জন্য এটি উপযুক্ত। পাশাপাশি সাদা অংশে আছে উচ্চ মানের প্রোটিন এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড, যা পেশি গঠন ও শরীরের পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা নেয়। সবচেয়ে বড় কথা, সাদা অংশে কোলেস্টেরল নেই, তাই কোলেস্টেরল রোগীরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
প্রোটিন নিয়ে ভুল ধারণা ভাঙছে বিজ্ঞান
অনেকে মনে করেন, ডিমের আসল প্রোটিন কেবল কুসুমে থাকে। কিন্তু আসলে সাদা অংশেও পর্যাপ্ত প্রোটিন মজুত রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই প্রোটিন শরীর দ্রুত গ্রহণ করতে পারে, যা ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে ফিটনেস সচেতনদের জন্য দারুণ উপযোগী।
কুসুমের শক্তি ও পুষ্টি
অন্যদিকে, ডিমের কুসুমও অবহেলার নয়। কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই, কে সহ নানা ভিটামিন, পাশাপাশি আয়রন, ফসফরাস ও জিঙ্কের মতো জরুরি খনিজ। এগুলো শরীরের রক্ত গঠন থেকে শুরু করে হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
কোলিনের গুরুত্ব
ডিমের কুসুমে থাকা কোলিন নামক উপাদান মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি রক্ষা করা থেকে শুরু করে হজমশক্তি উন্নত করায়ও এর ভূমিকা রয়েছে। এমনকি শরীরের বিপাকক্রিয়া সচল রাখতেও কোলিন কার্যকর।
ভালো ফ্যাটের ভাণ্ডার
হার্ট সুস্থ রাখতে ‘ভালো ফ্যাট’ খাওয়া দরকার। কুসুমে আছে পলি-আনস্যাচুরেটেড ও মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী। তবে কুসুমে কোলেস্টেরল বেশি হওয়ায়, যারা হৃদ্রোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
অর্থাৎ ডিমের সাদা অংশ আর কুসুম – দুটোরই আলাদা আলাদা গুণ আছে। ওজন নিয়ন্ত্রণে সাদা অংশ উপযোগী হলেও, কুসুমে লুকিয়ে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও ভালো ফ্যাটের ভাণ্ডার। তাই একেবারেই কুসুম বাদ দেওয়ার দরকার নেই। বরং শরীরের চাহিদা ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ডিমের সঠিক ব্যবহারই হতে পারে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসুরক্ষা।