কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে যে দুর্গা পূজা কমিটিগুলিকে অনুদান শুধুমাত্র তখনই দেওয়া হবে যখন তারা গত বছরের অনুদানের সঠিক হিসাব পেশ করবে। হিসাব দাখিল না করা কমিটিগুলি কোনও অনুদান পাবে না।
কলকাতা: উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার দুর্গা পূজা কমিটিগুলিকে দেওয়া সরকারি অনুদান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ক্লাবগুলি গত বছরের অনুদানের হিসাব দেবে না, তারা এই বছরের অনুদান পাবে না। এই পদক্ষেপ ক্লাবগুলিতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে যে সরকারি অনুদানের টাকা প্রমাণ ও হিসাব ছাড়া খরচ করা যাবে না। আদালত ক্লাবগুলিকে এক মাসের সময় দিয়েছে যাতে তারা তাদের গত বছরের অনুদানের প্রমাণ পেশ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী নতুন বছরের অনুদান মঞ্জুর করা যায়।
দুর্গাপূজা ক্লাবগুলির অনুদান এবং নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশ
রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়েছে যে ২০২৪ সালে মোট ২,৮৭৬টি দুর্গা পূজা ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাবগুলি সরকারি অর্থের ব্যবহারের জন্য প্রমাণপত্র জমা দিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪,৭৯৫টি পূজা কমিটিকে অনুদান দেওয়া হয়েছিল এবং ৪,৭৯২টি ক্লাব সময় মতো তাদের প্রমাণপত্র পেশ করেছে।
গত বছর প্রতি পূজা কমিটির অনুদান ছিল ৮৫,০০০ টাকা, যা এই বছর বেড়ে ১,১০,০০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যুতের বিলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে, নতুন ক্লাবগুলিকে এই বছরের গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি; শুধুমাত্র যে ক্লাবগুলি গত বছর অনুদান পেয়েছিল, তাদেরকেই পুরনো অনুদানের হিসাব দিতে হবে।
অনুদানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ
ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে হিসাব ছাড়া কোনও সরকারি অনুদান দেওয়া হবে না। আদালত আরও জানিয়েছে যে ক্লাবগুলি গত বছরের হিসাব দেয়নি, তাদের অনুদান পুনর্বিবেচনা করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাদের অনুদান আটকে দেওয়া হবে।
আদালত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হলফনামা তলব করেছে এবং সেই দিনই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আদালতের এই নির্দেশ এটা নিশ্চিত করে যে সরকারি অনুদানের ব্যবহার সঠিক পথে হবে এবং কোনও রকম অনিয়ম না হয়।
দুর্গা পূজা অনুদান নিয়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
বিজেপি কাউন্সিলর এবং শহরের পূজা কমিটিগুলির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সজল ঘোষ এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, "কোনও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের খেলা, মেলা, দুর্গা পূজা বা ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য সরকারি অর্থ খরচ করা উচিত নয়। সরকারের করের টাকা দিয়ে মানুষের উন্নয়ন এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।"
এই নির্দেশের পর শহরের দুর্গা পূজা কমিটিগুলি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে সেই ক্লাবগুলির জন্য এটি কঠিন হতে পারে যারা গত বছর তাদের খরচের কোনও প্রমাণ দাখিল করেনি।