তরুণরাও এখন হাঁটুব্যথার শিকার
আগে মনে করা হত হাঁটুর ব্যথা শুধু বয়সের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি সমস্যা। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে সেই ধারণা। আজকাল তরুণরাও ক্লান্তি, কাজের চাপ কিংবা পুষ্টির অভাবের কারণে তীব্র হাঁটুব্যথায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধুমাত্র বার্ধক্য নয়, বরং শরীরে নির্দিষ্ট ভিটামিনের ঘাটতিই হাঁটুর ব্যথার প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি সবচেয়ে বড় কারণ
হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে ভিটামিন ডি অপরিহার্য। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, যা হাড় ও জয়েন্টকে মজবুত রাখে। কিন্তু আধুনিক সময়ে মানুষ ঘরে-বাইরে কাজ করলেও সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকে। ফলে শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়, যা হাঁটু দুর্বল করে তোলে। বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ লভনীত বাত্রা সতর্ক করে বলেছেন, নিয়মিত সূর্যালোক না পেলে হাঁটুর ব্যথা বাড়তেই থাকবে।
ভিটামিন বি১২ কমলেই পেশী ও স্নায়ুর ক্ষতি
শুধু হাড় নয়, স্নায়বিক শক্তি বজায় রাখতেও ভিটামিন বি১২ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ঘাটতি হলে পেশী দুর্বল হয়ে যায়, হাত-পায়ে অসাড়তা আসে এবং হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়। হাঁটুর জড়তা, অবসাদ, এমনকি পায়ের ব্যথাও তখন বেড়ে যায়। নিরামিষভোজীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ ভিটামিন বি১২ মূলত পশু-ভিত্তিক খাবারেই পাওয়া যায়।
জয়েন্ট সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি অপরিহার্য
অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন সি-কে কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত করেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, এটি হাঁটুর স্বাস্থ্যের জন্যও সমান জরুরি। ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা হাড় ও জয়েন্টের টিস্যুকে দৃঢ় রাখে। এর অভাবে হাঁটুতে ফোলাভাব, ব্যথা এবং নড়াচড়ায় অস্বস্তি দেখা দেয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবু, কমলা, আমলা, পেয়ারা কিংবা সবুজ শাকসবজি থাকা দরকার।
হাড়কে মজবুত করে ভিটামিন কে
ভিটামিন কে সরাসরি হাড়ের খনিজ ঘনত্বের সঙ্গে যুক্ত। এটি শরীরে ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করতে সাহায্য করে। যদি ভিটামিন কে-এর ঘাটতি থাকে, তবে হাড় ফাঁপা হয়ে যায়, ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে এবং হাঁটুতে স্থায়ী ব্যথা শুরু হয়। পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি কিংবা মেথির মতো সবজি এই ভিটামিনের সহজ উৎস, যা খাদ্যতালিকায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শুধু ওষুধ নয়, চাই জীবনধারার পরিবর্তন
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—শুধু ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে হাঁটুব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। বরং শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি চিহ্নিত করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত পরীক্ষা জরুরি। ভিটামিন ডি, বি১২, সি এবং কে-সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও সূর্যালোকে কিছুক্ষণ সময় কাটানো হাঁটুকে শক্ত রাখার অন্যতম সেরা উপায়।