দুর্গাপুরে টোটোর দাপটে অচল মিনিবাস-অটো সপ্তাহের শুরুতেই চরম ভোগান্তি

দুর্গাপুরে টোটোর দাপটে অচল মিনিবাস-অটো সপ্তাহের শুরুতেই চরম ভোগান্তি

সপ্তাহের শুরুতেই বিপাকে নিত্যযাত্রী, অঘোষিত ধর্মঘটে স্তব্ধ মিনিবাস-অটো পরিষেবা

সোমবার সকাল থেকেই দুর্গাপুরবাসীকে পড়তে হল বড়সড় ভোগান্তিতে। কোনও আগাম নোটিস ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হল মিনিবাস ও অটো পরিষেবা। একদিকে যখন কর্মব্যস্ততা শুরু হওয়ার কথা, ঠিক তখনই শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিকা ও সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রইল মিনিবাস ও অটো। যাত্রীরা হতচকিত, রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনও উপায় নেই।

অভিযোগের কেন্দ্রে বেআইনি টোটো, হারাচ্ছে যাত্রী মিনিবাস-অটো

পরিস্থিতির কেন্দ্রে রয়েছে বেআইনি টোটোর ‘দাপাদাপি’। মিনিবাস ও অটো মালিকদের দাবি, টোটো চালকদের বেপরোয়া গতিবিধিতে রাস্তায় যাত্রী তোলা মুশকিল হয়ে পড়েছে। যাত্রী না পেয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে নিয়মিত পরিবহন চালকদের। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা পরিষেবা বন্ধ রেখেছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিনিবাস মালিকরা।

প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মালিক সংগঠন, পুরনো আশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ

মিনিবাস মালিক সংগঠনের সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ক্ষোভের সুর। তিনি জানান, ‘‘গত মে মাসেই তিন দিনের ধর্মঘট করেছিলাম প্রশাসনকে জানিয়ে। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, দু’মাসের মধ্যে অবৈধ টোটো সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। তাই এবার আর জানাইনি। আমরা নিজে থেকেই পরিষেবা বন্ধ রেখেছি।’’ তাঁর কথায়, এ প্রতিবাদ একান্তই নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে।

অচল প্রান্তিকা স্ট্যান্ডে নিস্তব্ধতা, বাস-কন্ডাক্টরদের আর্থিক অনিশ্চয়তা

সকালে প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেল একেবারে অন্য ছবি। সবসময় জমজমাট এই এলাকাটিতে টোটো তো দূরের কথা, মিনিবাস ও অটোও নেই। ৩৫ বছর ধরে বাসে কন্ডাক্টার হিসেবে কাজ করা সহদেব কুণ্ডু বলেন, দিন দিন যাত্রী সংখ্যা কমছে। টোটোর দৌরাত্ম্যে বাস চালিয়ে উপার্জন হচ্ছে না। ঠিকমতো মাইনে না পাওয়ায় সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ, পরীক্ষার দিনেও অনিশ্চয়তা

পরিবহণ বন্ধে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পড়ুয়ারা। দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্র সুজয় অধিকারী জানান, ‘‘আজ আমাদের পরীক্ষা আছে। সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। অটো বা মিনিবাস কিছুই নেই। এমনকি টোটোও দেখা যাচ্ছে না। কীভাবে সময়মতো কলেজে পৌঁছাব, বুঝতে পারছি না।’’ ভয়, উদ্বেগ ও ক্ষোভ— সবকিছুর মিশ্রণ চোখেমুখে।

‘বৈধ না হলে রেজিস্ট্রেশন কীভাবে?’ পাল্টা প্রশ্ন টোটো চালকদের

অন্যদিকে টোটো চালকরাও নিজেদের সাফাই দিচ্ছেন। স্বপন দাস নামে এক চালক বলেন, ‘‘নতুন টোটো কেনার পর পরিবহণ দপ্তর থেকে আমাদের রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও নির্দিষ্ট কোনও রুট পাইনি। তাই রাস্তায় ঘুরে যাত্রী তুলি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায়, তাহলে আমরা বেআইনি কীভাবে হই?’’ এই প্রশ্নই যেন গোটা বিতর্কের কেন্দ্রীয় ইস্যু হয়ে উঠেছে।

চলবে কতদিন এই অচলাবস্থা, উদ্বেগ বাড়ছে শহরজুড়ে

মিনিবাস ও অটো পরিষেবা কবে চালু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। টোটোর রুট নির্ধারণ এবং বেআইনি টোটোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের অবস্থান কী হবে, সেই দিকেই তাকিয়ে পরিবহণ পরিষেবা ও সাধারণ মানুষ। এই অচলাবস্থা যত দীর্ঘ হবে, ততই ভোগান্তির শিকার হবেন নিত্যযাত্রী ও শ্রমজীবী মানুষ। প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Leave a comment