দুর্গাপুরে ৫৪০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ২০২৬-এর নির্বাচনী প্রচার শুরু। বিজেপি একে উন্নয়নের সূচনা বললেও, টিএমসি আক্রমণ করে বলেছে, 'খেলা হবে'। আগামী ২১ জুলাই মমতার সমাবেশকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনৈতিক যুদ্ধ আরও তীব্র হতে চলেছে।
Mamata Banerjee or PM Modi: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে দুর্গাপুরের মাটি আজ ক্ষমতার দুই মেরু — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের — রণকৌশলগত প্রস্তুতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার প্রায় ছয় বছর পর দুর্গাপুরের মাটিতে পা রেখে এক বিশাল জনসভার মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ৫৪০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন।
দুর্গাপুর থেকে উন্নয়নের সংকল্প: ৫৪০০ কোটির উপহার
নেহেরু স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী শক্তি, পরিবেশ, পরিবহন এবং রেলওয়ে ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক প্রকল্প জনগণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। তিনি ভারত পেট্রোলিয়ামের সিটি গ্যাস প্রোজেক্ট, ১৩২ কিমি দীর্ঘ দুর্গাপুর-কলকাতা সেকশন, ফ্লু গ্যাস ডি সালফারাইজেশন সিস্টেম এবং ৩৬ কিমি দীর্ঘ পুরুলিয়া-কোতশিলা রেল লাইনের ডবলিং প্রোজেক্টের উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর মাধ্যমে পূর্ব ভারতে শুধু পরিকাঠামোর উন্নতিই হবে না, পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের অধীনে স্থাপিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পগুলিও জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন, যা বায়ু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রাজনীতির ময়দানে ‘টস’: বিজেপি দেখালো শক্তি
বিজেপির এই সমাবেশকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রথম বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমিক ভট্টাচার্য এটিকে 'বাংলায় বিজেপির নতুন যুগের সূচনা' বলে অভিহিত করেছেন। দলের দাবি, এই সমাবেশে দুই লক্ষেরও বেশি মানুষ যোগ দিয়েছিলেন, যাকে 'জনসমর্থনের সাগর' বলা হচ্ছে। শমিক ভট্টাচার্য বলেন, 'বাংলার এখন পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর রাজ্যকে উন্নয়নের নতুন দিশা দেখাবে। ডবল ইঞ্জিন সরকার বাংলার ভাগ্য পরিবর্তন করবে।'
TMC-র তীব্র আক্রমণ: '২০২৬ পর্যন্ত এখানেই থেকে যান প্রধানমন্ত্রী!'
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। টিএমসির যুব মোর্চার সভাপতি ও সাংসদ সায়নী ঘোষ বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী বার বার আসছেন, ট্যাক্সপেয়ারদের টাকা নষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার এখানেই থেকে যাবেন। কিন্তু আমরা ময়দানে আছি — খেলা হবে!' তিনি আরও বলেন যে প্রধানমন্ত্রীর হিন্দু-মুসলমান, শ্মশান-কবরস্থানের মতো বিষয়গুলি ছেড়ে বেকারত্ব, শিক্ষা এবং মহিলা সুরক্ষার মতো বাস্তব বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত। সায়নী ঘোষ ২০২১-এর নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'বিজেপি ২০০ পার করার দাবি করেছিল, কিন্তু ফলাফল কী হয়েছিল? এখন পেট্রোল ও ডিজেলই ২০০ পার করে গেছে।'
২১ জুলাই বনাম ১৯ জুলাই: দুটি সমাবেশ, দুটি দৃষ্টিভঙ্গি
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমাবেশের তিন দিন পর টিএমসির বার্ষিক শহীদ দিবস সমাবেশ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই দুটি সমাবেশ থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক দিশা নির্ধারিত হবে। একদিকে বিজেপি ‘উন্নয়ন’ ও ‘ডবল ইঞ্জিন’-এর স্লোগান দিচ্ছে, তো অন্যদিকে টিএমসি ‘বাঙালি সংস্কৃতি’ ও ‘কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির’ উপর জোর দিচ্ছে। টিএমসি নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে দল একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা দিতে চলেছে। তিনি বলেন, 'বাংলা নিজের নেতাকে চেনে। বহিরাগতরা যতই চেষ্টা করুক, বাংলার আত্মাকে বুঝতে পারবে না।'
দুর্গাপুর: বিজেপির জন্য রণকৌশলগত কেন্দ্র
দুর্গাপুরকে বিজেপি একটি শিল্প কেন্দ্র হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। একে ভারতের ‘রুঢ় অঞ্চল’ বলা হচ্ছে, এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সেই দিকেই একটি পদক্ষেপ। ১৩২ কিমি গ্যাস পাইপলাইন, নতুন রোড ওভার ব্রিজ এবং রেলওয়ে ডবলিং প্রোজেক্টগুলি থেকে এলাকার শিল্প ভবিষ্যৎ নতুন করে গড়ে ওঠার আশা করা যায়।
রাজনৈতিক মোকাবিলার শুরু
২০২৬-এর নির্বাচন এখনও অনেক দূরে, কিন্তু বাংলায় ক্ষমতার জন্য বিছানো দাবা বোর্ডে দুই দলের চাল দ্রুত হতে শুরু করেছে। দুর্গাপুর থেকে বিজেপি তাদের প্রচার শুরু করেছে, যেখানে টিএমসি কলকাতা থেকে পাল্টা আক্রমণ করবে। প্রশ্ন হল — 'ডবল ইঞ্জিন' কি বাংলাকে নতুন দিশা দেবে, নাকি 'খেলা হবে' স্লোগান আবার রং ছড়াবে? বাংলায় নির্বাচনী রণ: দুর্গাপুর থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর হুঙ্কার, TMC বলল – 'খেলা হবে'