বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানকে নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে ভারত-চিন সম্পর্কে তৃতীয় কোনও দেশের স্থান নেই। তিনি সীমান্ত বিবাদ, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
India-China Talks: ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সম্প্রতি চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনার সময় জয়শঙ্কর স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে ভারত ও চিনের পারস্পরিক সম্পর্কে তৃতীয় কোনও দেশের ভূমিকা থাকা উচিত নয়। তিনি পাকিস্তানের নাম না করে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বেজিং-এর তাদের সিদ্ধান্তগুলিতে ইসলামাবাদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।
LAC-তে উত্তেজনা এবং সীমান্ত স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা
১৪ জুলাই-এর এই সাক্ষাতে জয়শঙ্কর পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC)-তে ২০২০ সালের পর থেকে তৈরি হওয়া উত্তেজনার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে একটি স্থিতিশীল এবং শান্ত সীমান্তই ভারত-চিন সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি। বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন যে অক্টোবর ২০২৪-এ হওয়া একটি চুক্তির পর ভারতীয় সেনা ডেপসাং এবং ডেমচোকের মতো স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে পুনরায় টহল দেওয়া শুরু করেছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
জয়শঙ্কর বলেছেন যে এখন সময় এসেছে উভয় দেশ তাদের সেনাদের মধ্যে বিশ্বাস পুনরুদ্ধার এবং উত্তেজনা কমানোর উপায়গুলির ওপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করুক। তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে আজও উভয় দেশের প্রায় ৫০,০০০ সেনা এবং ভারী অস্ত্র সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে রেখেছে।
ভরসাযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ওপর উদ্বেগ
এই বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী চীনের কাছে এই প্রত্যাশা রেখেছেন যে তারা ভারতের জন্য একটি ভরসাযোগ্য সরবরাহ শৃঙ্খল বজায় রাখবে। তিনি বলেছেন যে চীনের ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত নয়। সম্প্রতি চীন অটোমোবাইল সেক্টরে ব্যবহৃত ম্যাগনেট এবং সারের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যার ফলে ভারতের শিল্পক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। জয়শঙ্কর এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বাণিজ্যিক আস্থা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর মনোভাব
আলোচনার সময় সন্ত্রাসবাদও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। জয়শঙ্কর বলেছেন যে ভারত ও চীনের সম্পর্ক কোনও তৃতীয় দেশ বিশেষ করে পাকিস্তানের উপর ভিত্তি করে হতে পারে না। তিনি এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে চীন, পাকিস্তানকে সামরিক অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সম্প্রতি এই অস্ত্রগুলি পাকিস্তান কর্তৃক অপারেশন সিন্ধুরে ব্যবহার করা হয়েছে।
জয়শঙ্কর ১৩ জুলাই সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন যে SCO-এর মূল উদ্দেশ্য হল সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের একসঙ্গে মোকাবিলা করা। ভারত এই নীতি মেনেই কাজ করে যাবে।
UN প্রস্তাবের অধীনে ভারতের পদক্ষেপের সমর্থন
জয়শঙ্কর ওয়াং ই-এর সঙ্গে আলোচনায় এটাও স্পষ্ট করেছেন যে ভারত কর্তৃক পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোর ওপর করা পদক্ষেপটি সম্মিলিত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব 16050-এর অধীনে ছিল। এই প্রস্তাব সন্ত্রাসবাদকে বিশ্ব শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে এবং এতে পাকিস্তান, চীন ও রাশিয়া সহ সকল সদস্য দেশের সম্মতি রয়েছে।