ভারতের FMCG সেক্টর অর্থাৎ ফাস্ট মুভিং কনজিউমার গুডস মার্কেট এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। যেখানে আগে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, ITC, নেসলে ইন্ডিয়া এবং টাটা কনজিউমারের মতো বড় কোম্পানিগুলোর বাজার ছিল, এখন সেখানে ছোট এবং স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো তাদের দখলে চ্যালেঞ্জ জানাতে শুরু করেছে। এই ব্র্যান্ডগুলো শুধু বড় নামগুলোকে টেক্কা দিচ্ছে না, বরং নিজেদেরকে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তাদের পছন্দের সঙ্গে মানিয়েও নিচ্ছে।
ছোট ব্র্যান্ডের বড় লাফ
আজকের ভোক্তা এখন শুধু নামে কেনে না, সে দেখে যে প্রোডাক্টটা কী দিচ্ছে। এই ভাবনাটাই ছোট ব্র্যান্ডগুলোকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। 1to3 নুডলস, বালাজি ওয়েফার্স, রুংটা টি এবং মারিও বিস্কুট-এর মতো ব্র্যান্ডগুলো এমন উদাহরণ, যারা এখন গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছে। এই ব্র্যান্ডগুলো বড় ব্র্যান্ডের মতো বিশাল প্রচারের পেছনে টাকা খরচ না করে তাদের প্রোডাক্টের গুণগত মান, দাম এবং স্থানীয় স্বাদের দিকে নজর দিয়েছে।
স্থানীয় সংযোগই বড় শক্তি হয়ে উঠছে
ভারতবর্ষের মতো বিভিন্নতা পূর্ণ দেশে প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি জেলা এবং এমনকি প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব পছন্দ রয়েছে। ছোট ব্র্যান্ডগুলো এই পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছে এবং তাদের প্রোডাক্টগুলোকে সেই অনুযায়ী তৈরি করেছে। গুজরাটের স্বাদের জন্য আলাদা চিপস, বিহারের স্বাদের জন্য বিশেষ বিস্কুট, মহারাষ্ট্রের জন্য স্থানীয় মশলার নুডলস – এই ব্র্যান্ডগুলো ছোট এলাকার পছন্দকে মাথায় রেখে বিশেষ প্রোডাক্ট তৈরি করেছে। এটাই কারণ যে মানুষজন এই ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে নিজেদের বেশি যুক্ত মনে করে।
নেসলের মতো কোম্পানিগুলোও শিখছে
নেসলে ইন্ডিয়ার এমডি সুরেশ নারায়ণন নিজেই স্বীকার করেছেন যে ছোট এবং স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো বাজারকে বদলে দিয়েছে। এগুলো শুধু ভোক্তাদের বেশি বিকল্প দিচ্ছে তা নয়, বড় কোম্পানিগুলোকেও শেখাচ্ছে যে পরিবর্তন জরুরি। আজকের প্রজন্ম পুরনো নামের সঙ্গে নয়, নতুন সুবিধা এবং গুণগত মানের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এটাই কারণ যে বড় কোম্পানিগুলোকে এখন তাদের রণনীতি নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
কম খরচ, দ্রুত পরিবর্তন
বড় ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় ছোট ব্র্যান্ডগুলো বেশি দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। এদের পরিচালনা স্থানীয় স্তরে হয়, তাই প্রোডাক্টের পরিবর্তন আনা, সাপ্লাই চেন বদলানো বা নতুন ফ্লেভার লঞ্চ করা এদের জন্য সহজ হয়। পাশাপাশি, এদের খরচও কম হয়। বড় ব্র্যান্ডগুলো যেখানে বিশাল মার্কেটিং বাজেট এবং বড় ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থায় জড়িয়ে থাকে, সেখানে ছোট ব্র্যান্ডগুলো কম খরচেও তাদের কাজ চালায়।
ই-কমার্স এবং কুইক ডেলিভারি দিয়েছে নতুন ডানা
ডিজিটাল যুগে এখন জিনিস কেনার পদ্ধতিও বদলে গেছে। Blinkit, Zepto, BigBasket এবং Amazon-এর মতো কুইক ডেলিভারি পরিষেবাগুলো ছোট ব্র্যান্ডগুলোকে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর রাস্তা খুলে দিয়েছে। আগে যেখানে শুধু বড় কোম্পানিগুলোরই শক্তিশালী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ছিল, এখন সেখানে ছোট ব্র্যান্ডগুলোও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দূর-দূরান্তের গ্রামেও তাদের পণ্য পাঠাতে পারছে।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ছে দখল
ছোট ব্র্যান্ডগুলোর আরেকটি শক্তি হল গ্রামীণ ভারতে তাদের পৌঁছানো। গ্রাম এবং ছোট শহরগুলোতে বড় ব্র্যান্ডের তুলনায় স্থানীয় ব্র্যান্ডের প্রভাব অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। কারণ স্পষ্ট – এই ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি এবং প্রয়োজন বোঝে। এদের পণ্য শুধু সস্তাই নয়, সেই এলাকাগুলোতে সহজেই পাওয়া যায়, যেখানে আগে শুধুমাত্র বড় কোম্পানিগুলোরই দখল ছিল।
গ্রাহকদের পরিবর্তিত চিন্তাভাবনা খুলে দিয়েছে দরজা
আজকের গ্রাহকরা অনেক বেশি সচেতন। তারা এটা দেখে না যে প্রোডাক্টের নাম কী, বরং এটা দেখে যে সেটা তাদের কাজের কিনা। ব্র্যান্ডিংয়ের চেয়ে তারা গুণগত মান, স্বাদ, দাম এবং সহজলভ্যতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ছোট ব্র্যান্ডগুলো এই চারটি বিষয়ের ওপর মনোযোগ দিয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে।
বড় নামগুলো এখন ছোটদের থেকে শিখছে
আজকের পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ব্যবসার পদ্ধতি বদলে গেছে। HUL, ITC-র মতো কোম্পানিগুলোকেও এখন তাদের রণনীতিতে পরিবর্তন করার প্রয়োজন অনুভব হচ্ছে। স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি, নমনীয়তা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তাদের বাধ্য করছে ছোট চিন্তা গ্রহণ করতে। বড় ব্র্যান্ডগুলো এখন ছোট ছোট মার্কেটের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং সেখানকার চাহিদা অনুযায়ী তাদের পণ্যে পরিবর্তন আনছে।
স্টার্টআপ সংস্কৃতি বাজারের চেহারা বদলে দিয়েছে
স্টার্টআপ সংস্কৃতিও স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোকে অনেক শক্তিশালী করেছে। যুবকেরা এখন চিরাচরিত চাকরির পরিবর্তে নতুন ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। এটাই কারণ যে প্রতি মাসে নতুন নতুন ব্র্যান্ড বাজারে আসছে, যা গ্রাহকদের প্রয়োজনকে আরও ভালোভাবে বোঝে এবং সেই অনুযায়ী সমাধান দেয়।