ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে 'গুড ট্রাবল' আন্দোলনের অধীনে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং গণতন্ত্র রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে।
Washington D.C: আমেরিকা আবারও প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে, এবং এই বার কারণ হলেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত নীতি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। আমেরিকার ৫০টি রাজ্যে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এই আন্দোলন শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতবিরোধের প্রতীক নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নাগরিক অধিকারের আহ্বান হয়ে উঠেছে।
ট্রাম্পের নীতিতে ক্ষুব্ধ জনতা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো— তা স্বাস্থ্যখাতে কাটছাঁট হোক, অভিবাসনের উপর কঠোর পদক্ষেপ হোক, অথবা জাতিগত বৈষম্যকে উপেক্ষা করা— সাধারণ আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি যখন তিনি ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পুনরায় নিজের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করেছেন, তখন থেকেই এই অসন্তোষ একটি আন্দোলনের রূপ নিতে শুরু করেছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ট্রাম্পের আচরণ আমেরিকান সংবিধান, নাগরিক স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়ের নীতির পরিপন্থী। এই কারণে 'গুড ট্রাবল লাইভস অন' নামক আন্দোলনের শুরু হয়েছে, যা পুরো আমেরিকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
৫০টি রাজ্যে একযোগে প্রতিবাদ
‘গুড ট্রাবল’ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর ব্যাপকতা। আমেরিকার সমস্ত ৫০টি রাজ্যে একসঙ্গে বিক্ষোভ হয়েছে, যা আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা, ইলিনয়— সর্বত্র ট্রাম্প বিরোধী স্লোগান শোনা গেছে। নিউইয়র্ক সিটিতে বিক্ষোভকারীরা ICE (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) ভবনের বাইরে রাস্তা অবরোধ করে বসে থাকেন। এই বিক্ষোভ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে কারণ এটি শুধুমাত্র ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধেই ছিল না, বরং আমেরিকাতে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বানও ছিল।
১৬০০-র বেশি স্থানে জমায়েত
বিক্ষোভ কেবল বড় শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আটলান্টা (জর্জিয়া), সেন্ট লুইস (মিসৌরি), অ্যানাপোলিস (মেরিল্যান্ড), ওকল্যান্ড (ক্যালিফোর্নিয়া) এর মতো ছোট ও মাঝারি শহরগুলোতেও হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এই আন্দোলন ১৬০০-র বেশি স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মানুষজন কেবল রাজনৈতিক কর্মী বা সমাজসেবী ছিলেন না, বরং সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক এবং এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও শামিল হয়েছিলেন। সকলের একটাই দাবি ছিল— ট্রাম্পের মতো নেতাদের গণতন্ত্র থেকে দূরে রাখা হোক।
জন লুইসের উত্তরাধিকার থেকে অনুপ্রাণিত
এই প্রতিবাদ আন্দোলনের নাম 'গুড ট্রাবল লাইভস অন' এই কারণে দেওয়া হয়েছে কারণ এটি বিখ্যাত নাগরিক অধিকার নেতা জন লুইসের চিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত। জন লুইস, যিনি আমেরিকাতে জাতিগত সাম্য ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন, তিনি সবসময় বলতেন— 'ভালো ঝামেলায় পড়ো, প্রয়োজনীয় ঝামেলায় পড়ো।' এই আন্দোলন জন লুইসের এই চিন্তাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এটি নাগরিকদের আওয়াজকে আরও জোরালো করার এবং গণতন্ত্রকে বাঁচানোর লড়াই হয়ে উঠেছে।
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লিসা গিলবার্ট, যিনি পাবলিক সিটিজেন সংস্থার সহ-সভাপতি, তিনি বলেছেন, 'আমরা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে রয়েছি। যখন নাগরিকদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিপদে, তখন চুপ থাকা অন্যায়।' অন্যান্য বিক্ষোভকারীরাও ট্রাম্পের নীতিকে 'ফ্যাসিবাদী ও অমানবিক' আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে আমেরিকাকে আবারও ন্যায় ও সাম্যের পথে ফিরতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও উত্তেজনা
এই আন্দোলন কেবল রাস্তায়ই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও উত্তাল হয়ে উঠেছে। #GoodTrouble, #ProtestTrump, #SaveDemocracy এর মতো হ্যাশট্যাগ টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ট্রেন্ড করতে শুরু করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন।