পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করেছেন। এক্স প্ল্যাটফর্ম এটিকে 'বিভ্রান্তিকর খবর' হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ঐতিহাসিক নথি দ্বারা প্রমাণ করেছে যে ১৯৪৭ সালে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের জন্য 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন'-এ স্বাক্ষর করেছিলেন।
নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭ সালের ঘটনা নিয়ে একটি বিভ্রান্তিকর পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করে ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অভিযোগ এনেছেন এবং বলেছেন যে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন (human rights violation) হচ্ছে। এই পোস্টটি তিনি তার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন।
এক্স (X) করেছে ফ্যাক্ট-চেক
শাহবাজ শরিফের এই দাবির ওপর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (X) তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং এটিকে 'বিভ্রান্তিকর খবর' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এক্স-এর কমিউনিটি নোটসে জানানো হয়েছে যে, মহারাজা হরি সিং ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন'-এ স্বাক্ষর করেছিলেন। এর পরেই ভারত ২৭ অক্টোবর শ্রীনগরে সেনা পাঠিয়েছিল অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
শাহবাজের এই পোস্টের ওপর এক্স (X)-এ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে। অনেক ব্যবহারকারীই ঐতিহাসিক নথি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবিকে ভুল প্রমাণ করেছেন। এক্স (X) ভারতের সরকারি রেডিও পরিষেবা আকাশবাণীর আর্কাইভ থেকে নথিপত্রের লিঙ্কও শেয়ার করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগদানের পরেই সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছিলেন।
পাকিস্তানে বিভ্রান্তিকর খবরের প্রবণতা
ভুয়া খবর ছড়ানোর এই প্রবণতা পাকিস্তানে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত পৌঁছেছে। প্রতি বছর ২৭ অক্টোবর পাকিস্তান কাশ্মীরের বিষয়ে কান্নাকাটি করে এবং এটিকে বিশ্বব্যাপী বাড়িয়ে উপস্থাপন করে। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী শ্রীনগরে পৌঁছেছিল এবং অঞ্চলটিকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে মুক্ত করেছিল। পাকিস্তান এই তারিখকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৪৭ সালের ঐতিহাসিক ঘটনাক্রম
১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজনের সময় জম্মু-কাশ্মীর একটি স্বাধীন দেশীয় রাজ্য ছিল। মহারাজা হরি সিংয়ের কাছে ভারত, পাকিস্তান বা স্বাধীনতার মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার বিকল্প ছিল। ২২ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সমর্থিত উপজাতি লস্কর মুজাফফরাবাদ, ডোমেল হয়ে শ্রীনগরের দিকে আক্রমণ শুরু করে। এই অনুপ্রবেশকারীরা ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত উরি এবং বারামুলা দখল করে নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে মহারাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।
ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন এবং সেনা মোতায়েন
ভারত স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, জম্মু-কাশ্মীর আইনগতভাবে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হলে তবেই সেনা পাঠানো হবে। মহারাজা হরি সিং ২৬ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন'-এ স্বাক্ষর করেন। এর পরের দিন ২৭ অক্টোবর ভারতের প্রথম সেনা দল ১ শিখ রেজিমেন্ট শ্রীনগর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ব্রিগেডিয়ার জে.সি. কাটোচের নেতৃত্বে সৈন্যরা অবিলম্বে বারামুলার দিকে অগ্রসর হয় এবং অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করে। এটি ছিল ভারতের প্রথম বিমানবাহিত সামরিক অভিযান (airborne military operation)।
পাকিস্তানের প্রচার নীতির বিরোধিতা
এক্স (X)-এর ফ্যাক্ট-চেকিং নীতি, যা ২০২৫ সালের মে মাস থেকে কার্যকর হয়েছে, এই ধরনের মিথ্যা দাবি নিয়ন্ত্রণে রাখছে। এখন অনেক পাকিস্তানি নেতার বিভ্রান্তিকর দাবিগুলির ওপর নোট সংযুক্ত করা হয়। মহারাজা হরি সিংয়ের 'ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন' ছাড়াও বেশ কিছু ঐতিহাসিক নথির লিঙ্ক শেয়ার করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে ভারত কেবল আইনগতভাবে জম্মু-কাশ্মীরে সেনা পাঠিয়েছিল।











