বন্ধুদের সঙ্গে পার্টিতে বিপদ: গুয়াহাটির এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে গিয়েছিলেন। ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাটে চলছিল আনন্দ-আড্ডা। কিন্তু সেখানেই ঘটে গেল ভয়ানক বিপর্যয়। অভিযোগ, ওই পার্টিতে উপস্থিত পাঁচ নাবালক সহপাঠী মিলে ২১ বছরের তরুণীকে অচেতন অবস্থায় গণধর্ষণ করে।
অভিযুক্তদের পরিচয় ও পুলিশি পদক্ষেপ
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত পাঁচজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং বয়সে নাবালক। ঘটনার পরই নির্যাতিতা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যেই দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ, বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পূর্ব গৌহাটির ডিসিপি অমিতাভ বসুমাতারি জানিয়েছেন, “প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে। পাঁচ অভিযুক্তই নাবালক। তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
মদ্যপ অবস্থার সুযোগ নিল অভিযুক্তরা
তদন্তকারীদের কাছে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, পার্টির সময় তিনি কিছুটা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। সেই সুযোগ নিয়েই অভিযুক্তরা তাঁকে অচেতন করে যৌন নির্যাতন চালায়। তরুণী সেসময় বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। পরদিন সকালে জেগে ওঠার পর শরীরে ব্যথা অনুভব করেন এবং ঘটনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করেন।
এফআইআর দায়ের ও তদন্ত শুরু
ভুক্তভোগী তরুণী সঙ্গে সঙ্গেই গৌহাটির পানি খাইটি আউটপোস্টে গিয়ে এফআইআর দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকেও প্রমাণ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর তদন্ত আরও গতি পাবে বলে জানা গিয়েছে।
সমাজে ক্ষোভ ও আতঙ্ক
এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিক্ষোভে সামিল হয়ে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। স্থানীয় অভিভাবকরাও আতঙ্কিত— তাঁদের বক্তব্য, “যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এমন ঘটতে পারে, তবে ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়?”
আইনি জটিলতা নাবালক অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে
অভিযুক্ত পাঁচজনই নাবালক হওয়ায় আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কিশোর বিচার আইন অনুযায়ী তাঁদের বিশেষ আদালতে হাজির করা হবে। তবে এই অপরাধ গুরুতর হওয়ায় অভিযুক্তদের প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই বিচার করার দাবি তুলছেন মহিলাদের অধিকার কর্মীরা।
ত্রিপুরা ঘটনার পুনরাবৃত্তি!
সম্প্রতি ত্রিপুরায়ও এক গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। তার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও উত্তর-পূর্ব ভারতে একই ধরনের ঘটনা ঘটায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে। একাধিক সংগঠন বলছে, এভাবে ধারাবাহিক যৌন হিংসার ঘটনায় সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ছে।
গুয়াহাটির এই ঘটনাটি ফের একবার প্রমাণ করল, পার্টি, বন্ধুত্ব বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গা— কোথাওই নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়। নাবালক অভিযুক্তদের জড়িত থাকার বিষয়টি যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনই সমাজের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপাতত পুলিশের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ভুক্তভোগী তরুণীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কোনওরকম আপস করা হবে না।