হরিয়ালী তিজে মেহেন্দির গুরুত্ব: ঐতিহ্য, সৌভাগ্য ও সম্পর্কের উদযাপন

হরিয়ালী তিজে মেহেন্দির গুরুত্ব: ঐতিহ্য, সৌভাগ্য ও সম্পর্কের উদযাপন

হরিয়ালী তিজ, শ্রাবণ মাসে উদযাপিত একটি উৎসব যা বিবাহিত এবং অবিবাহিত উভয় মহিলার জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। দোলনা, গান-বাজনা, সাজসজ্জা এবং বিশেষ করে মেহেন্দি – এই সবকিছু মিলে এই উৎসবকে বিশেষ করে তোলে। কিন্তু যখন হাতের মেহেন্দির কথা আসে, তখন এটি কেবল একটি প্রসাধন সামগ্রী থাকে না, বরং এটি হয়ে ওঠে বিশ্বাস, সম্পর্ক এবং ঐতিহ্যের গভীর অভিব্যক্তি।

প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পালিত হওয়া হরিয়ালী তিজ, এবার ৩১শে জুলাই ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনে মহিলারা ঐতিহ্যবাহী সবুজ বস্ত্র পরিধান করে, চুড়ি, গয়না, খোপা এবং মেহেন্দি লাগিয়ে সম্পূর্ণ রীতি-নীতি মেনে শিব ও পার্বতীর পূজা করেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, হরিয়ালী তিজে মেহেন্দি লাগানোর এত বিশেষ গুরুত্ব কেন? আসুন, এই প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করি।

মেহেন্দি লাগানোর ঐতিহ্য বহু পুরনো

ভারতে মেহেন্দি লাগানোর ঐতিহ্য হাজার বছর ধরে চলে আসছে। প্রাচীন গ্রন্থ, শিল্পকলা এবং চিত্রকর্মেও মেহেন্দির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। তিজের মতো সৌভাগ্যের উৎসবে মেহেন্দিকে শুভ, সৌন্দর্য এবং নারীত্বের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। মনে করা হয়, মেহেন্দির সুবাস এবং রং স্বামীর দীর্ঘায়ু এবং সুখী দাম্পত্য জীবনের কামনার সঙ্গে জড়িত।

হরিয়ালী তিজে মহিলারা মেহেন্দিকে সম্পূর্ণ বিধি-বিধান মেনে তাঁদের হাত ও পায়ে সাজান। এটিকে কেবল একটি সাজসজ্জার অংশ হিসেবে নয়, বরং একটি ধর্মীয় ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।

হরিয়ালী তিজ এবং সৌভাগ্যের গভীর সম্পর্ক

এই উৎসবটি বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের উৎসব, যেখানে তাঁরা স্বামীর দীর্ঘ জীবন, পরিবারের সমৃদ্ধি এবং সুখের কামনা করেন। মেহেন্দিকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সৌভাগ্যবতী মহিলারা এই দিনে মেহেন্দি লাগিয়ে মা পার্বতী ও শিবের কাছে তাঁদের বৈবাহিক জীবনের সুরক্ষা এবং উন্নতির জন্য প্রার্থনা করেন।

এমনও মনে করা হয় যে, মা পার্বতী শিবকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন এবং অবশেষে শ্রাবণ মাসেই তাঁদের মিলন হয়েছিল। এই কারণেও এই উৎসবটি সৌভাগ্য এবং ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

মেহেন্দির রঙের সঙ্গে জড়িত বিশ্বাস

কথিত আছে, মেহেন্দির রং যত গাঢ় হয়, স্বামীর প্রেমও তত গভীর হয়। এই কথা শুনতে হয়তো পুরনো লাগে, কিন্তু আজও এই প্রবাদটি মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। মহিলারা মেহেন্দিতে তাঁদের স্বামীর নামের অক্ষর লুকিয়ে রাখেন, যা স্বামীকে খুঁজে বের করতে হয়। এটি একটি সুন্দর খেলার মাধ্যমে সম্পর্কের মাধুর্য ও বন্ধন বাড়ায়।

সাজসজ্জার উৎসব

হরিয়ালী তিজ মহিলাদের জন্য এমন একটি উৎসব, যেখানে তাঁরা নিজেদের বিশেষ অনুভব করার সম্পূর্ণ সুযোগ পান। সবুজ রঙের শাড়ি বা স্যুুট, চুড়ি, টিপ, খোপা, দোলনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেহেন্দি – এই সবকিছু মিলে এই উৎসবকে বিশেষ করে তোলে।

মহিলারা এই দিনে নিজেকে বধূর মতো সাজান এবং মন থেকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজা করেন। এটি তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের সাংস্কৃতিক শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে।

সম্প্রদায়ের মধ্যে মিলন ও সহানুভূতির भावना

হরিয়ালী তিজের আরেকটি প্রধান দিক হল সামষ্টিকতা এবং মেলামেশার ঐতিহ্য। গ্রাম ও ছোট শহরগুলিতে আজও মহিলারা এক জায়গায় একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে পূজা করেন, দোলনা দোলেন, লোকনৃত্য করেন এবং একে অপরের হাতে মেহেন্দি লাগান।

মেহেন্দির থালা সাজানো, একে অপরের হাতে ডিজাইন করা এবং মেহেন্দি লাগানোর সময় গানের মাধুর্য – এই সবই সমাজে একতা ও সমর্থনমূলক भावना বাড়ায়। এই উৎসব মহিলাদের কেবল ধর্মীয়ভাবে একত্রিত করে না, বরং সামাজিক দিক থেকেও তাঁদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করে তোলে।

Leave a comment