হরিয়ানাতে ১লা অগাস্ট থেকে সম্পত্তির সংশোধিত কালেক্টর হার লাগু করা হতে পারে, যার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জমি ও সম্পত্তি কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। সরকার এই নতুন হারের খসড়া ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে এবং ৩১শে জুলাই পর্যন্ত মানুষের কাছ থেকে আপত্তি চাওয়া হয়েছিল। এখন এই আপত্তিগুলির উপর বিবেচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
বিরোধী দল কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে যে কালেক্টর হার বাড়লে জমির রেজিস্ট্রেশনের খরচ বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের উপর অর্থনৈতিক চাপ পড়বে। সরকার বলছে যে এই হার বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এতে স্বচ্ছতা বাড়বে।
কালেক্টর হার কী
কালেক্টর হার হল সেই সর্বনিম্ন মূল্য, যে মূল্যে সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয় সরকারি নথিতে নথিভুক্ত করা হয়। স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশন ফি এই হারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, যদি কোনও এলাকার কালেক্টর হার বাড়ে, তবে সেখানে জমি কিনতে বেশি ট্যাক্স এবং রেজিস্ট্রেশন চার্জ দিতে হবে।
সরাসরি কথায় বলতে গেলে, এটি সরকারি মূল্য যা নির্ধারণ করে যে কোনও জমি বা বাড়ি কেনার সময় সরকারকে কমপক্ষে কত টাকা জানাতে হবে এবং রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এখন সরকার যদি এই হার বাড়ায়, তাহলে সম্পত্তির মোট খরচও বাড়বে।
গুরুগ্রামে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি
রাজ্যের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং দ্রুত বিকাশমান শহর গুরুগ্রামে কালেক্টর হারে বড় উল্লম্ফন দেখা যেতে পারে। খসড়া অনুসারে, হাইওয়ে থেকে দুই একর দূরত্বে অবস্থিত গ্রামীণ এলাকার জমি, যা আগে ২৫,৩০০ টাকা প্রতি বর্গ গজ ছিল, এখন তা ৪৫,০০০ টাকা প্রতি বর্গ গজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে — অর্থাৎ প্রায় ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
এছাড়াও কার্টারপুরী এলাকায় ২৫ শতাংশ এবং ওল্ড ডিএলএফ কলোনিতে ১৯ শতাংশ পর্যন্ত হার বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এতে সেখানে সম্পত্তি কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
অন্যান্য জেলাগুলিতেও বাড়ছে হার
শুধু গুরুগ্রাম নয়, রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও কালেক্টর হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে:
• রোহটকে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত হার বাড়তে পারে।
• পাঞ্চকুলার অনেক সেক্টরে বড় ধরনের বৃদ্ধির প্রস্তাব রয়েছে।
• শিল্পাঞ্চলে রেট বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।
সরকারের যুক্তি হল সম্পত্তির ক্রয়-বিক্রয়ে অনিয়ম রোধ করতে এবং বাজারের হারের সাথে সঙ্গতি রেখে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
কংগ্রেসের তরফে একে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ বলা হয়েছে
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা এই বৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, সরকার ১০ থেকে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হার বাড়িয়েছে, যা সরাসরি গরিব ও মধ্যবিত্তের উপর আক্রমণ।
হুডা ফতেহাবাদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, যেখানে আগে জমির হার ছিল ১৫,০০০ টাকা প্রতি বর্গ গজ, এখন তা ৩৫,০০০ টাকা করা হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে গত বছর ডিসেম্বরেই ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়েছিল এবং এখন মাত্র ৮-৯ মাসের মধ্যে আবার হার বাড়ানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভুল।
মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা জবাব
বিরোধী দলের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিং সাইনি বলেন যে কংগ্রেসের শাসনকালেও কালেক্টর হারে সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত নতুন হার বাজারে প্রচলিত মূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তাই এতে সাধারণ মানুষের উপর কোনও অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
মধ্যবিত্তের চিন্তা
কংগ্রেসের আরও বক্তব্য হল যে আগে কালেক্টর হারে সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হত। কিন্তু এখন প্রতিটি মহল্লা, গলি এবং গ্রামের জন্য আলাদা আলাদা ভারী হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে গরিব ও মধ্যবিত্তের কোমর ভেঙে যাবে এবং তাদের নিজের বাড়ির স্বপ্ন আরও দূরে চলে যাবে।