জবা গাছে নেই ফুল লাল রক্তজবা ঝলমল করবে টবে জানুন ম্যাজিক ট্রিক

জবা গাছে নেই ফুল লাল রক্তজবা ঝলমল করবে টবে জানুন ম্যাজিক ট্রিক

বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ায় জবা

প্রায় প্রতিটি বাংলার বাড়িতেই এক কোণে বা টবে দেখা মেলে জবা গাছের। উঠোন, ছাদ কিংবা ব্যালকনি—যেখানেই রাখা হোক না কেন, এই ফুল গাছ বাড়ির সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তোলে। শুধু তাই নয়, পূজা-অর্চনার জন্য জবার ব্যবহার একে আরও বেশি অপরিহার্য করে তুলেছে।

ফুল না ফুটলে হতাশা

কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন সবুজ সতেজ জবা গাছ হঠাৎ ফুল দেওয়া বন্ধ করে দেয়। গাছ দেখে যতই ভালো লাগুক না কেন, ফুল না থাকলে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে চিন্তার কারণ নেই, কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সঠিক যত্ন ও কয়েকটি ঘরোয়া টোটকা মেনে চললেই আবার রঙিন জবায় ভরে উঠবে আপনার প্রিয় গাছ।

বিশেষ কৌশলের জাদু

অনেক সময় দেখা যায়, গাছ ঠিক মতো বাড়ছে, পাতা সবুজ টলটলে, অথচ ফুল ফুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন সঠিক কৌশল। মাত্র কিছু নিয়ম মেনে চললেই প্রতিদিন সজিতে লাল রক্তজবা থেকে শুরু করে ঝুমকো জবা সাজানো সম্ভব। সত্যিই যেন এক টুকরো ম্যাজিক।

উদ্যানপালকদের মতে সেরা সমাধান

উদ্যানবিদ এবং অভিজ্ঞ চাষিদের মতে, জবা গাছে ফুল ফোটানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। সঠিক সময়ে ছাঁটাই, আলো-বাতাসের উপস্থিতি এবং মাটির গুণগত মান—সবকিছু মিলে গাছের ফুল ফোটানোর প্রক্রিয়া নির্ভর করে। তাই এখনই শিখে নিন সেই সেরা কৌশল।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

লোকাল 18-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে উদ্যান বিশেষজ্ঞ আরইএইচও মীনাক্ষী ভার্মা জানিয়েছেন, অনেকেই অভিযোগ করেন গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠলেও ফুল ফুটছে না। এর মূল কারণ, গাছে যথাযথ সূর্যালোক, প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং সময়মতো ছাঁটাইয়ের অভাব। ফলে গাছ ফুলের পরিবর্তে শুধু পাতার দিকে শক্তি খরচ করে।

ছাঁটাইয়ের গুরুত্ব

প্রথমেই জবা গাছের পুরনো ও শুকনো ডাল কেটে ফেলা জরুরি। এতে গাছ অপ্রয়োজনীয় অংশে শক্তি নষ্ট না করে কুঁড়ি তৈরিতে মনোযোগ দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস ছাঁটাইয়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে ছাঁটাই করলে সারা বছর ভালো ফুল পাওয়া সম্ভব।

সূর্যালোকের সঠিক যোগান

যদি জবা গাছ সারাক্ষণ ছায়ায় থাকে, তবে ফুল ফোটার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। প্রতিদিন অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা রোদ পাওয়া গাছের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে সকালের মিষ্টি সূর্যালোক গাছকে আরও তরতাজা করে তোলে এবং ফুল ফোটাতে সহায়তা করে।

মাটির গুণগত মান

জবা গাছ সবসময় হালকা ও ভঙ্গুর মাটি পছন্দ করে। ভারী বা জল জমে থাকা মাটিতে শিকড় সহজেই পচে যেতে পারে। তাই মাটির সঙ্গে বালি, নারকেলের ছোবড়া (কোকোপিট) ও ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে ব্যবহার করলে গাছ অনেক সুস্থ থাকে এবং দ্রুত ফুল ফোটে।

জল দেওয়ার নিয়ম

অতিরিক্ত জল দেওয়া জবা গাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গ্রীষ্মকালে মাটি একেবারে শুকিয়ে গেলে জল দিতে হবে, তবে শীতে জলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। বেশি জল দিলে শিকড়ে পচন ধরে যায় এবং ফুল ফোটার প্রক্রিয়া থেমে যায়।

পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা

গাছে ফুল ফোটাতে ফসফরাস ও পটাসিয়ামের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মাসে অন্তত একবার এই উপাদানযুক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত। ঘরোয়া উপায়ে কলার খোসা, চা পাতা বা ডিমের খোসা দিয়ে তৈরি জৈব সারও অত্যন্ত কার্যকর। এতে গাছ স্বাভাবিকভাবে শক্তি পায় এবং ফুলে ভরে ওঠে।

শুকনো ফুল তুলে ফেলা জরুরি

অনেক সময় শুকনো ফুল গাছে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এগুলো না তুললে গাছ বীজ তৈরিতে শক্তি খরচ করে, ফলে নতুন ফুল কমে যায়। তাই নিয়মিত শুকনো ফুল তুলে ফেলা উচিত। এতে গাছ নতুন কুঁড়ি গজাতে দ্রুত সক্ষম হয়।

শেষ কথা

জবা গাছ শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, পূজা-অর্চনার সঙ্গে এর বিশেষ সম্পর্ক আছে। তাই ফুল না ফুটলে মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে সঠিক যত্ন, পর্যাপ্ত আলো, ছাঁটাই এবং ঘরোয়া সার ব্যবহার করলে আবারও লাল জবা ভরে উঠবে আপনার প্রিয় গাছে। আসলে সামান্য যত্নই ফিরিয়ে দিতে পারে অসাধারণ রূপ।

Leave a comment