বিদেশ মন্ত্রকের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং কূটনৈতিক শক্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। জি-২০-এর সভাপতিত্ব থেকে শুরু করে ২০টি দেশে ত্রাণ অভিযান পর্যন্ত, ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
বিদেশ মন্ত্রকের রিপোর্ট: ভারত ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার উপস্থিতি সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত জি-২০-এর আয়োজন, জি-৭ এবং ব্রিক্সের মতো প্রধান আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলিতে অংশগ্রহণ এবং ২০টিরও বেশি দেশে ত্রাণ অভিযানের মাধ্যমে তার কূটনৈতিক খ্যাতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হওয়ার প্রচেষ্টা ভারতের আন্তর্জাতিক পরিচিতিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভারতের দৃঢ়তা
বিদেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এই বছর বিশ্বজুড়ে আসা প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, যখন বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতা, জলবায়ু সংকট এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা মোকাবেলা করছিল, তখন ভারত একটি স্থিতিশীল, দায়িত্বশীল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতের সক্রিয় আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ
প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত ২০২৪ সালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এবং সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে প্রধান হল জাতিসংঘ, জি-২০, জি-৭, ব্রিক্স, কোয়াড এবং এসসিও।
গত বছর ভারত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করে, যা বৈশ্বিক কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই বছর ভারত ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মিলিতভাবে জি-২০ ট্রোইকার অংশ ছিল এবং একসঙ্গে বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে।
১৮-১৯ নভেম্বর, রিও ডি জেনেইরো (ব্রাজিল)-এ অনুষ্ঠিত ১৯তম জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সম্মেলনটি এই কারণেও ঐতিহাসিক ছিল যে এতে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান ইউনিয়ন পূর্ণ সদস্য হিসেবে অংশ নিয়েছিল।
গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হিসেবে ভারতের উত্থান
ভারত ‘ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর তৃতীয় সংস্করণের আয়োজন করে। এই সম্মেলনে বিশ্বের ১৭৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে প্রধানত উন্নয়নশীল এবং দক্ষিণ গোলার্ধের রাষ্ট্রগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সম্মেলনটি ভারতের 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' নীতিকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরে।
ভারত এই মঞ্চ থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলির চাহিদা ও চ্যালেঞ্জগুলিকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় প্রধান্য দিয়েছে। একইসঙ্গে, এটিও স্পষ্ট করেছে যে ভারত কেবল নিজের নয়, বরং গ্লোবাল সাউথেরও কণ্ঠস্বর হিসেবে উঠে আসতে চায়।
সন্ত্রাসবাদের প্রতি কঠোর মনোভাব
বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিবেদনে ভারতের সেই মনোভাবের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, যেখানে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করেছে। জি-৭ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ত্রাসবাদের নির্মূলের বিষয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই দিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের অংশগ্রহণ এই প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন।
২০টির বেশি দেশে ত্রাণ অভিযান
ভারত কেবল কূটনৈতিক স্তরেই নয়, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ ত্রাণ (HADR) এর ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ভারত ২০২৪ সালে ২০টিরও বেশি দেশে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে।
প্রধান অভিযানগুলি হল:
- হাইতিতে ‘অপারেশন ইন্দ্রাবতী’
- কুয়েতে এয়ারলিফ্ট অভিযান
- মায়ানমারে ‘অপারেশন সদ্ভাবনা’
এই অভিযানগুলির মাধ্যমে ভারত প্রমাণ করেছে যে তারা সংকটের সময় একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু এবং অংশীদার।