কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে আলোয় ভাসছে জেলার ঐতিহ্য!

কলকাতার গণ্ডি পেরিয়ে আলোয় ভাসছে জেলার ঐতিহ্য!

কলকাতা শহরের বহু পুরনো স্থাপত্য, যেগুলি এতদিন নিছক ইতিহাসের বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ ছিল, সেগুলি গত কয়েক বছরে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’-এর প্রচেষ্টায়। সেন্ট পলস চার্চ, ধর্মতলার ঐতিহাসিক দালান, কিংবা সেন্ট জেমস চার্চ—সবই রাতের আকাশে একেকটা দীপ্ত নক্ষত্রের মতো। ৮৯টি প্রাচীন সৌধের সৌন্দর্য ফিরিয়ে এনে এই সংগঠন যেন শহরের বুকে সময়কে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এবার কলকাতার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে তারা ছুঁতে চাইছে জেলার ঐতিহ্যকেও।এখানে মূলত তুলে ধরা হয়েছে ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’-এর শহর কেন্দ্রিক কাজ ও তাদের লক্ষ্যবিস্তারের সূচনা।

হুগলি নদীর ধারে ইতিহাসের আলো—ইমামবাড়া নতুন সাজে

হুগলির ইমামবাড়া—যে স্থাপত্য বছরের পর বছর ধরে ইতিহাসপ্রেমীদের পায়ে চলা পথ হয়ে থেকেছে, এবার রাতেও তার সৌন্দর্য ধরা দিচ্ছে নতুন আলোর আবরণে। ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’–এর নতুন পদক্ষেপে এই প্রাচীন স্থাপত্য পেয়েছে এক মোহনীয় আলোকসজ্জা। জোড়া মিনার ও ক্লক টাওয়ারের শোভা এখন রাতের আঁধারেও বিস্ময় জাগায়। মাত্র ছ’দিনে এই বৃহৎ আলোকায়ন সম্পন্ন করেছে দলটি, যা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে।আলোচনায় এসেছে হুগলির ইমামবাড়ার বর্তমান রূপান্তর এবং কত দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।

 ঘড়ি যন্ত্রে ইতিহাস, আলোয় ফিরে দেখা এক পুরোনো সময়

ইমামবাড়ার যে ক্লক টাওয়ার আজও প্রতিদিন সময় জানান দেয়, সেটির পিছনে আছে এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস। ১৮৫২ সালে লন্ডনের বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হারে’ কোম্পানি এই ঘড়িটি তৈরি করে দেয় মাত্র ১২ হাজার টাকায়। ঘড়িটি আজও সচল, তবে তার যত্ন সহজ নয়—২০ কেজির ওজনের চাবি দিয়ে সপ্তাহে দু'বার ‘দম’ দিতে হয় দু’জনকে। আধুনিক যুগে এসে সেই ঐতিহ্য আজও অক্ষুণ্ণ, এবং আলোয় স্নাত হয়ে তার মহিমা যেন আরও জোরালো।ইমামবাড়ার ঘড়ি এবং তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এই অংশে।

আলোকসজ্জায় ভাসছে জেলার পর্যটন সম্ভাবনা

শুধু আলোর খেলা নয়, ‘দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স’-এর এই উদ্যোগ এক নতুন রাতের পর্যটন সম্ভাবনার পথ খুলে দিচ্ছে। আগে যেসব দর্শনার্থীরা শুধুমাত্র দিনের বেলা ঘুরতে আসতেন, এখন তারাও রাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পারেন। হুগলি নদীর ধারে সন্ধ্যার পর আলোয় ঝলমল করে ওঠা ইমামবাড়ার মতো জায়গা পর্যটনের নতুন ঠিকানা হয়ে উঠতে চলেছে—এই বিশ্বাস রাখছে সংশ্লিষ্ট সংগঠন।আলোচনায় এসেছে কীভাবে এই উদ্যোগ স্থানীয় পর্যটনের পরিধি ও পরিপ্রেক্ষিত বদলাতে পারে।

ঐতিহ্য রক্ষায় আলোর রাজনীতি—পরীবাড়ি থেকে কালিম্পং পর্যন্ত পরিকল্পনা

ইমামবাড়া আলোকায়নের পর, সংগঠনটির পরবর্তী লক্ষ্য ইছাপুরের পরীবাড়ি, কালিম্পংয়ের গ্রাহাম হোম গির্জা এবং আরও বহু স্থাপত্য। ইতিমধ্যেই দার্জিলিংয়ের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ় চার্চ আলোয় সাজিয়ে দিয়েছে তারা। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে এনার্জি–এফিশিয়েন্ট আলো, আর রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থারাই বহন করবে খরচ। এই উদ্যোগ শুধু স্থাপত্য রক্ষা নয়, পরিবেশ সচেতনতার সঙ্গেও যুক্ত।এখানে তুলে ধরা হয়েছে পরবর্তী প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা এবং পরিবেশবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি।

এক নতুন ইতিহাস রচনার সূচনা

আলোকসজ্জা মানে শুধু বাহ্যিক শোভা নয়। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক নতুন বয়ান। দ্য ক্যালকাটা রেস্টোরার্স দেখিয়ে দিয়েছে—আধুনিক প্রযুক্তি আর নান্দনিক পরিকল্পনা মিললে কীভাবে মৃতপ্রায় সৌধও হয়ে উঠতে পারে জীবন্ত সংস্কৃতি কেন্দ্র। শুধু শহর নয়, জেলার বুকেও এবার জ্বলে উঠছে গর্বের আলো।

Leave a comment