আগস্ট ১, ২০২৫ থেকে আমেরিকার পক্ষ থেকে ভারতীয় রপ্তানির উপর চাপানো ২৫ শতাংশ শুল্ক এখন প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কবার্তার পর ভারতের অনেক সরকারি তেল কোম্পানি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকা এই শুল্ক ভারতের রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় এবং সামরিক চুক্তির কারণে চাপিয়েছে, যার ফলে এখন দেশের বিদেশ নীতির পাশাপাশি জ্বালানি নীতির উপরও প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে।
রাশিয়ান তেল থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে সরকারি পরিশোধন কোম্পানিগুলি
দেশের তিনটি প্রধান সরকারি তেল কোম্পানি ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (BPCL), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (HPCL) এবং ম্যাঙ্গलोर রিফাইনারিজ অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস লিমিটেড (MRPL) এখন রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল কেনা থেকে পিছিয়ে গেছে। এই কোম্পানিগুলি সাম্প্রতিক টেন্ডারে রাশিয়ান ইউরালস গ্রেড তেল অন্তর্ভুক্ত করেনি, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকার শুল্ক সতর্কতার প্রভাব ভারতীয় জ্বালানি সেক্টরের উপর পড়ছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিকল্প
এখন যখন সরকারি কোম্পানিগুলি রাশিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে, তখন তারা মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার মতো ঐতিহ্যবাহী উৎসের দিকে ফিরছে। যদিও এই অঞ্চলগুলি থেকে পাওয়া অপরিশোধিত তেল রাশিয়ান তেলের চেয়ে বেশি দামি, যার ফলে পরিশোধন কোম্পানিগুলির মার্জিনে প্রভাব পড়তে পারে। অর্থাৎ, কোম্পানিগুলির খরচ বাড়বে এবং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধির রূপে দেখা যেতে পারে।
IOCL-এর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
যদিও এখনও পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম পরিশোধন কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (IOCL) কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেনি, তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, কোম্পানি তাদের ক্রুড সোর্সে পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করছে। IOCL আগে রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে সস্তা অপরিশোধিত তেল কিনত।
রিলায়েন্স এবং নায়রার কৌশল আলাদা
যেখানে সরকারি কোম্পানিগুলি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেছে, সেখানে বেসরকারি খাতের কোম্পানি – রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং নায়রা এনার্জি – এখনও রাশিয়ান তেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। এই দুটি কোম্পানি রাশিয়া থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির অধীনে তেল কেনে এবং এতে তারা ভালো মার্জিনও পায়। এছাড়াও, এই কোম্পানিগুলি পরিশোধিত পণ্য ইউরোপ এবং এশিয়ার বাজারে রপ্তানি করে মুনাফা করছে।
২০২৪-২৫ সালে রাশিয়া থেকে রেকর্ড আমদানি
অর্থবর্ষ ২০২৪-২৫-এ ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৫০.৩ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে। এটি ভারতের মোট ১৪৩.১ বিলিয়ন ডলারের ক্রুড অয়েল আমদানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে ভারতের জ্বালানি চাহিদায় রাশিয়ার ভূমিকা কতটা বড় ছিল।
তেল মন্ত্রীর সতর্কতা
১৭ জুলাই কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে যদি রাশিয়া থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হয়, তবে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ১৩০ থেকে ১৪০ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেছিলেন যে ভারত যে কোনও পরিস্থিতিতে তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য উৎস থেকে অপরিশোধিত তেল আনিয়ে নেবে, কারণ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের কোনও অভাব নেই।
রাশিয়ার সস্তা তেল, কিন্তু রাজনৈতিক চাপ বেশি
ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা দেশগুলির কঠোরতার কারণে রাশিয়া ভারত-এর মতো দেশগুলিতে তাদের অপরিশোধিত তেল বিশাল ছাড়ে বিক্রি করছিল। ভারত এর সুবিধা নিয়ে গত দুই বছরে রাশিয়া থেকে বড় পরিমাণে সস্তা তেল কিনেছে। এতে সরকারি রিফাইনারিগুলির খরচ কমেছে এবং কোম্পানিগুলি ভালো মুনাফা করেছে। কিন্তু এখন আমেরিকার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তের পর এই সস্তা চুক্তি ঝুঁকিতে পড়েছে।
ভারতের কৌশল কি বদলাবে
এখনও পর্যন্ত ভারত সরকার এর উপর কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি যে সরকারি কোম্পানিগুলির এই পদক্ষেপ কোনো রাজনৈতিক চাপে নেওয়া হয়েছে নাকি এটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মার্কিন শুল্ক থেকে বাঁচতে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে এটি একটি সুচিন্তিত কৌশল হতে পারে।
তেল কোম্পানিগুলোর সিদ্ধান্তের প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর
যদি সরকারি কোম্পানিগুলো রাশিয়া থেকে তেল না কিনে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশি দামে তেল কিনতে বাধ্য হয়, তবে ভবিষ্যতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামে প্রভাব পড়তে পারে। পরিশোধন খরচ বাড়লে কোম্পানিগুলো তা গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে।