গালওয়ানের ক্ষত এখনও টাটকা, তবু চিনকে ঘিরে বন্ধুত্বের সুরে সাড়া দিল দিল্লি
২০২০ সালের ১৫ জুন, গালওয়ান উপত্যকায় রক্তাক্ত সংঘর্ষের সাক্ষী হয়েছিল গোটা দেশ। চিনা সেনার হাতে শহিদ হন ভারতের ২০ জওয়ান। সেই ঘটনার পর ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেন জমাট বাঁধা বরফে পরিণত হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে কূটনৈতিক চাপানউতোর, সীমান্ত উত্তেজনা ও আস্থা সংকট। এমন এক পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই চিনের উদ্দেশে বন্ধুত্বের বার্তা দিল ভারত—পাঁচ বছর পরে চালু হল চিনা নাগরিকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা!
পাঁচ বছর পর ‘বন্ধ দরজা’ খুলল ভারত, ফের চালু হল চিনা পর্যটকদের ভিসা
দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে ২৪ জুলাই ২০২৫ থেকে ভারতের পর্যটন ভিসার দরজা খুলে দেওয়া হল চিনা নাগরিকদের জন্য। কোভিড অতিমারি ও গালওয়ান সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে চিনা নাগরিকদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা স্থগিত করেছিল ভারত। সেই নিষেধাজ্ঞা এবার উঠল। কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্বাভাবিকতা ফেরানো এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভ্রমণে বন্ধন হোক ভরসার, ভারত-চিন সম্পর্কের ‘পলিটিকাল সফট লঞ্চ’?
বিশ্বজুড়ে যখন পর্যটনের নবজাগরণ চলছে, তখন ভারতও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণে পুরোদমে প্রস্তুত। এই পটভূমিতে চিনের নাগরিকদের ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত শুধু কূটনৈতিক না, অর্থনৈতিকও বটে। চিনের বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘ইতিবাচক’ বলে অভিহিত করেছে। তাঁদের মতে, এটি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সফরের পরিবেশকে উন্নত করবে।
চিনা পর্যটকেরা ফের এলে লাভবান হবে পর্যটন শিল্প, আশা করছেন ব্যবসায়ীরা
ভারতের পর্যটন ও ব্যবসায়িক মহল বহুদিন ধরেই চিনা পর্যটকদের জন্য ভিসা চালুর দাবি জানাচ্ছিল। তাঁদের মতে, চিন থেকে প্রচুর পর্যটক ভারতে আসেন এবং খরচও করেন ঢের বেশি। তাজমহল থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ধর্মস্থল—চিনা পর্যটকেরা নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির টানে ভারতে আসেন। তাঁদের আগমন থেমে যাওয়ায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে এই সিদ্ধান্ত বড় ভরসা।
তবু কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন, সীমান্তে রক্ত মুছল তো? চিনের উপর ভরসা কতটা যুক্তিযুক্ত?
তবে সব মহলে এই সিদ্ধান্তকে ‘চোখ বুজে প্রশংসা’ করা হচ্ছে না। একাংশ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সীমান্তে আজও শান্তি পুরোপুরি ফেরেনি। ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা এখনও জিইয়ে রয়েছে, প্যাংগং হ্রদ বা ডেমচক—প্রতিটি এলাকা জর্জরিত সেনা মোতায়েন আর নজরদারিতে। এই পরিস্থিতিতে পর্যটন ভিসার অনুমতি দেওয়া কূটনৈতিকভাবে কতটা ঠিক, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কূটনৈতিক সহানুভূতি না কৌশল? ‘সতর্কতা ভুললে বিপদ’ বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সীমান্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি মিটে না যাওয়া পর্যন্ত চিনের উপর নির্ভরতা বিপজ্জনক হতে পারে। ভারতের উচিত প্রতিটি পদক্ষেপে কৌশলী থাকা, কারণ অতীতে বহুবার বন্ধু সেজে পিছন থেকে ছুরি মেরেছে চিন। ফলে এই ‘বন্ধুত্বের বার্তা’ আদৌ আন্তরিক নাকি শুধুই অর্থনৈতিক স্বার্থে চালানো চাল, তা নিয়েও চলছে জোর চর্চা।