রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের অবস্থান: চাপের কাছে নতি স্বীকার নয়

রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের অবস্থান: চাপের কাছে নতি স্বীকার নয়

আমেরিকা এবং ন্যাটো দেশগুলির পক্ষ থেকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র সরকার দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী এই বিষয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন এবং স্পষ্ট করে বলেছেন যে ভারত তার ভোক্তাদের স্বার্থে যা সঠিক হবে সেটাই করবে। তিনি আমেরিকার পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সেকেন্ডারি স্যাংশনের হুমকিকেও সরাসরি জবাব দিয়েছেন।

'আমি প্রেশার নিই না, আমার বসের মস্তিষ্ক প্রেশারের জন্য তৈরিই হয়নি'

হরদীপ পুরী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তিনি কোনো ধরনের চাপে কাজ করেন না এবং তার বস অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মস্তিষ্ক কোনো চাপের জন্য তৈরিই হয়নি। শুধু তাই নয়, তিনি বলেছেন যে তিনি এখান থেকেই শক্তি পান। তিনি আরও বলেন যে ভারতের জ্বালানি নীতি শুরু থেকেই ভোক্তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এবং এতে কোনো বাইরের শক্তির চাপ কাজ করে না।

রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ভারতের অবস্থান

পুরী জানান যে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ভারত তার মোট চাহিদার মাত্র ০.২ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে কিনত, কিন্তু আজ এই অংশটি অনেক বেড়ে গিয়েছে। তিনি আরও জানান যে আগে ভারত ২৭টি দেশ থেকে তেল কিনত এবং এখন এই সংখ্যা ৪০-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ, ভারত তার সরবরাহকে আরও বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সুরক্ষিত করেছে।

ন্যাটো প্রধানের হুমকিকে ভারত দিয়েছে যোগ্য জবাব

সম্প্রতি ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে বলেছিলেন যে যদি ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যায়, তাহলে তার উপর ১০০ শতাংশ সেকেন্ডারি স্যাংশন আরোপ করা হতে পারে। এর জবাবে হরদীপ পুরী কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই বলেছেন যে ভারত তার জ্বালানি নীতি নিয়ে কারও চাপে আসতে রাজি নয়। তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অগ্রাধিকার সবসময় দেশের ভোক্তাদের প্রয়োজন।

বিদেশ মন্ত্রকও সরকারের পক্ষ রেখেছে

ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালও স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে দেশের অগ্রাধিকার হল তার নাগরিকদের জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা। তিনি বলেন যে ভারত বাজারের উপলব্ধ সম্পদ এবং বিশ্ব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের এই নীতি কোনো রকম চাপের মুখাপেক্ষী নয়।

আমেরিকার ট্যারিফ হুমকি এবং সম্ভাব্য প্রভাব

আমেরিকার ধারণা, রাশিয়া ভারত, চীন এবং ব্রাজিলের কাছে তেল বিক্রি করে ইউক্রেন যুদ্ধের ফান্ডিং করছে। এই কারণে আমেরিকা চায় যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করুক। এই প্রচেষ্টায় আমেরিকার সেনেটররা একটি নতুন বিল আনার কথা বলেছেন, যেখানে রাশিয়া থেকে তেল কেনা দেশগুলির উপর ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ চাপানোর কথা বলা হয়েছে।

যদি এমনটা হয়, তাহলে আমেরিকার ভারত থেকে হওয়া আমদানির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ভারত আমেরিকা ওষুধ, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট, টেক্সটাইল, মেশিনারি এবং সার্ভিসের একটি বড় অংশ রপ্তানি করে। ট্যারিফ বাড়লে এই পণ্যগুলো আরও দামি হয়ে যাবে, যার ফলে আমেরিকাতে এদের চাহিদা কমতে পারে।

ইরানি তেল নিয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট

যখন ইরানি তেল কেনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন পুরী বলেন যে ইরানের তেল বাজার থেকে গায়েব হয়ে যায়নি। কিন্তু যদি এর উপর কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকে এবং ভারত তা মানে, তাহলে ভারত সেই আইন পালন করবে। এর মানে হল যে ভারত আন্তর্জাতিক নিয়মকে সম্মান জানিয়ে নিজের নীতি নির্ধারণ করে।

ভারতের জ্বালানি চাহিদা এবং বিশ্ব জ্বালানি বাজারে ভূমিকা

হরদীপ পুরী আরও জানান যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ। তিনি বলেন যে বিশ্বের জ্বালানি বাজারে গত দশ বছরে যে বৃদ্ধি হয়েছে, তার ১৬ শতাংশ শুধুমাত্র ভারতের অবদান। একই সময়ে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে আগামী কুড়ি বছরে গ্লোবাল এনার্জি মার্কেটে যে বৃদ্ধি হবে, তার ২০ শতাংশ আসবে ভারত থেকে।

এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে ভারতের চাহিদাকে উপেক্ষা করা যায় না এবং বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বিষয়ক আলোচনাতে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ভারতের স্বাধীন বিদেশ ও জ্বালানি নীতি

পুরী আবারও বলেন যে ভারতের জ্বালানি নীতি সবসময় স্বাধীন থেকেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না। তিনি বলেন যে ভারত তার প্রয়োজন এবং তার ভোক্তাদের স্বার্থে যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে চলবে।

ভারত সরকারের এই অবস্থান থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ নিজের নীতি নিজেই ঠিক করে এবং কোনো বিশ্বশক্তির কাছে মাথা নত করে না। এতে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

Leave a comment