ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: নতুন দিগন্তের সূচনা

ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি: নতুন দিগন্তের সূচনা

ভারত ও যুক্তরাজ্যের (UK) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। এই ঐতিহাসিক চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি লন্ডন থেকে প্রায় ২ ঘণ্টার দূরত্বে বাকিংহামশায়ারের চিল্টার্ন হিলসে অবস্থিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কান্ট্রি হাউস চেকার্সে অনুষ্ঠিত হবে।

চেকার্স একটি ১৬ শতকের ঐতিহাসিক বাংলো, যা বর্তমানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কান্ট্রি রিট্রিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানেই উভয় দেশের প্রতিনিধিদল এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তিটি চূড়ান্ত করবে।

ভারতীয় প্রতিনিধিদলে রয়েছেন দেশের दिग्गज শিল্পপতিরা

যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে চলা এই বড় অনুষ্ঠানে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে স্পেশাল সেক্রেটারি এবং চিফ নেগোশিয়েটর এল. সত্য শ্রীনিবাস, ইন্ডাস্ট্রি সেক্রেটারি অমরদীপ সিং ভাটিয়াও রয়েছেন।

এছাড়াও ১৬ সদস্যের বিজনেস ডেলিগেশনে ভারতের অনেক নামকরা শিল্পপতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে ভারতী এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান সুনীল ভারতী মিত্তল, এসার গ্রুপের সিইও প্রশান্ত রুইয়া, মাহিন্দ্রা গ্রুপের এমডি অনীশ শাহ, ওয়ো-র প্রতিষ্ঠাতা রিতেশ আগরওয়াল এবং সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জীর মতো ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

এই প্রতিনিধিদল যুক্তরাজ্যের শীর্ষ কর্পোরেট লিডারদের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার বিষয়ে আলোচনা করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাজ্য সফর, নজর বিশ্ব বাণিজ্য মহলের

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে বলেছেন যে, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিগত কয়েক বছরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই সফরের উদ্দেশ্য হল বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা এবং শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলিতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ানো।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের একটি গন্তব্য মালদ্বীপও হবে, তবে আপাতত সবার নজর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে চলা এই বৃহৎ বাণিজ্যিক চুক্তির দিকে।

পীযূষ গোয়েল এবং জোনাথন রেনল্ডস চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন

ভারতের পক্ষ থেকে এই চুক্তিতে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং ব্রিটেনের পক্ষ থেকে বিজনেস অ্যান্ড ট্রেড সেক্রেটারি জোনাথন রেনল্ডসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এর পরে শুক্রবার একটি B2B সম্মেলনের আয়োজন করা হবে, যেখানে উভয় দেশের শিল্পপতিদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনা এবং বাণিজ্যিক সুযোগ নিয়ে আলোচনা হবে।

ভারতের পক্ষ থেকে রপ্তানিতে বড় সুবিধা

FTA চুক্তি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে হওয়া প্রায় ৯৯ শতাংশ রপ্তানির ওপরের শুল্ক শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে ভারতের জন্য ব্রিটেনে নিজেদের পণ্য পাঠানো সস্তা এবং সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, চামড়া এবং জুয়েলারি সেক্টর এই চুক্তি থেকে অসাধারণ সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য সংগঠন FIEO-এর সভাপতি এস.সি. রলহানের মতে, এই চুক্তির ফলে শ্রম নির্ভর সেক্টরে চাকরির সম্ভাবনা বাড়বে এবং বিনিয়োগের প্রবাহকেও বাড়িয়ে তুলবে।

জেমস-জুয়েলারি সেক্টরকে নিয়ে বড় আশা

জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (GJEPC) চেয়ারম্যান কিরিট ভংসালী, যিনি এই ডেলিগেশনের অংশ, তাঁর মতে ভারত থেকে জেমস ও জুয়েলারির রপ্তানি আগামী বছর $7 বিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তিনি মনে করেন যে, বিশেষত স্টাডেড জুয়েলারির চাহিদা যুক্তরাজ্যে দ্রুত বাড়তে চলেছে।

এই চুক্তির আওতায় ভারত যুক্তরাজ্য থেকে সোনা, রূপা এবং প্ল্যাটিনাম আমদানি করতে পারবে, তবে এর ওপর কিছু নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা হবে।

যুক্তরাজ্য সংসদে অনুমোদন বাকি, ভারতে প্রয়োগের আনুষ্ঠানিকতা

ভারত সরকার এই চুক্তিটিকে ইতিমধ্যেই ক্যাবিনেট থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। এখন এটিকে কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে এই চুক্তিটিকে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে, তার পরেই এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী হতে পারবে।

ভারত-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায় যে FY24-এ ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে মোট বাণিজ্য $55 বিলিয়নের বেশি ছিল। যুক্তরাজ্য ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ, যাদের মোট বিনিয়োগ এখনও পর্যন্ত $36 বিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছেছে। অন্যদিকে ভারতও যুক্তরাজ্যে $20 বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক এখন আরও গভীর হতে চলেছে, কারণ FTA-এর মতো চুক্তি ভারতকে বিশ্ব বাজারে আরও শক্তিশালী করে তুলছে। বিশেষ বিষয় হল, ভারত আমেরিকার সাথেও একই ধরনের ট্রেড চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি রয়েছে।

ব্যবসায়িক মহলে উৎসাহ, বিশ্ব স্তরে মিলবে গুরুত্ব

ভারত-যুক্তরাজ্য FTA নিয়ে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়িক মহলে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে। এটিকে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে নয়, বরং কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন যুগের শুরু হিসেবে মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশের সরকার এবং শিল্প মহল এখন একসাথে এর মাধ্যমে নতুন সুযোগের সন্ধানে जुटবে।

Leave a comment