দেশে ডিজিটাল জালিয়াতি এবং ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারির ঘটনা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতারকরা ভয় এবং লোভ ব্যবহার করে ব্যাঙ্কিং এবং ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। সতর্কতা, লিঙ্কে ক্লিক না করা এবং সাইবার ক্রাইম পোর্টালে রিপোর্ট দায়ের করা প্রতিরোধের প্রধান উপায়।
ডিজিটাল জালিয়াতি সতর্কতা: ভারতে ডিজিটাল জালিয়াতি এবং ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারির ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, বিশেষ করে গত দেড় বছরে অবসরপ্রাপ্তরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছেন। প্রতারকরা নিজেদের সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভয় বা লোভ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা এবং ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো অচেনা কল, মেসেজ বা লিঙ্কে বিশ্বাস করবেন না এবং সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিন। সাইবার জালিয়াতির ঘটনা এড়াতে সাইবার ক্রাইম পোর্টালে (cybercrime.gov.in) অভিযোগ দায়ের করা এবং সতর্ক থাকা জরুরি।
ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারি কী?
ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারি এক ধরনের সাইবার জালিয়াতি, যেখানে প্রতারকরা নিজেদের সিবিআই, পুলিশ, ইডি বা অন্য সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেয়। তারা ভুক্তভোগীকে ভয় দেখায় যে যদি তাদের কথা না শোনা হয় তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। অপরাধীরা অনলাইনে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে।
এই কেলেঙ্কারির প্রক্রিয়া সাধারণত ধাপে ধাপে হয়। প্রথমে, অপরাধীরা ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি করা হয়। ভিডিও কলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত টাকার দাবি করা হয়। টাকা স্থানান্তর হওয়ার সাথে সাথে প্রতারকরা হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।
ডিজিটাল গ্রেপ্তার কেলেঙ্কারি থেকে কীভাবে বাঁচবেন
- আইনি অবস্থা: ভারতীয় আইনে 'ডিজিটাল গ্রেপ্তার'-এর মতো কোনো বিধান নেই। কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট নিয়ে সরাসরি বাড়িতে আসবে।
- ঘাবড়ে যাবেন না: প্রতারকদের ভয় দেখানোর চেষ্টায় পড়বেন না এবং শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিন।
- তথ্য শেয়ার করবেন না: কোনো অচেনা কল, মেসেজ বা লিঙ্কের মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত এবং ব্যাঙ্কিং তথ্য শেয়ার করবেন না।
- সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দিন: সন্দেহজনক কল বা ভিডিও কল এলে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিন।
- রিপোর্ট করুন: জালিয়াতির তথ্য পেলে ১৯30 নম্বরে কল করে অবিলম্বে রিপোর্ট দায়ের করুন।
অন্যান্য সাধারণ জালিয়াতির পদ্ধতি
- ফিশিং কেলেঙ্কারি: প্রতারকরা ভুয়া ইমেল বা মেসেজে লিঙ্ক পাঠায়। ক্লিক করলেই আপনি কোনো ভুয়া ওয়েবসাইটে চলে যাবেন বা আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার/ভাইরাস প্রবেশ করবে।
- লটারি এবং চাকরি জালিয়াতি: অচেনা ব্যক্তি চাকরির বা লটারি জেতার লোভ দেখিয়ে টাকা চায়। একবার টাকা পাঠানোর পর তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
- ভুয়া কাস্টমার কেয়ার নম্বর: প্রতারকরা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গুগল সার্চ রেজাল্টে ভুয়া কাস্টমার কেয়ার নম্বর প্রথম পাতায় এনে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
জালিয়াতি প্রতিরোধের সহজ উপায়
- অচেনা লিঙ্ক থেকে বাঁচুন: কোনো অচেনা ইমেল, মেসেজ বা ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
- নিরাপদ তথ্য শেয়ার করুন: OTP, CVV বা ATM পিনের মতো সংবেদনশীল তথ্য কোনো অচেনা ব্যক্তির সাথে শেয়ার করবেন না।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড এবং ভেরিফিকেশন: মোবাইল এবং ল্যাপটপে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড সেট করুন এবং অ্যাপগুলিতে দ্বি-স্তরীয় যাচাইকরণ ব্যবহার করুন।
- অ্যান্টি-ভাইরাস সুরক্ষা: ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসে অ্যান্টি-ভাইরাস সফ্টওয়্যার ইনস্টল করুন এবং নিয়মিত আপডেট করুন।
সাইবার জালিয়াতি হেল্পলাইন
যদি কোনো ব্যক্তির সাথে সাইবার জালিয়াতি বা ডিজিটাল প্রতারণা হয়, তবে অবিলম্বে সাইবার ক্রাইম পোর্টালে (cybercrime.gov.in) অভিযোগ দায়ের করুন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সতর্কতা এবং সাবধানতাই ডিজিটাল জালিয়াতি থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কোনো সন্দেহজনক কল, মেসেজ বা লিঙ্ক এড়িয়ে চলুন এবং সময়মতো রিপোর্ট দায়ের করুন, যাতে আপনি এবং আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকতে পারে।