ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত প্রথম একদিনের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দারুণ জয়লাভ করেছে। এই ম্যাচে দীপ্তি শর্মার অসাধারণ অর্ধশতরানের ইনিংস এবং স্নেহ রানার দুর্দান্ত বোলিং টিম ইন্ডিয়ার জয়ের প্রধান কারণ ছিল।
খেলাধুলার খবর: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত প্রথম একদিনের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে পরাজিত করে তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে। এই शानदार জয়ের মাধ্যমে হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে দল গত লর্ডস টেস্টের হারের প্রতিশোধ নিয়েছে। এই ম্যাচে ভারতীয় দলের হয়ে দীপ্তি শর্মা যেমন ব্যাট হাতে কামাল দেখিয়েছেন, তেমনই বোলিংয়ে স্নেহ রানা এবং ক্রান্তি গৌড় ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বেশ परेशान করেছেন।
প্রথমে ভারতীয় বোলারদের দাপটে ধরাশায়ী ব্যাটসম্যানরা
এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ন্যাট সিভার ব্রান্ট টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও ইংল্যান্ডের শুরুটা খুবই খারাপ ছিল। ভারতীয় ফাস্ট বোলার ক্রান্তি গৌড় শুরু থেকেই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলেন এবং দলকে দুটি প্রাথমিক ধাক্কা দেন। তিনি ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ট্যামি বিউমন্ট (৫) এবং উইকেটরক্ষক অ্যামি জোনসকে (১) অল্প রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। এর ফলে ইংল্যান্ডের স্কোর মাত্র ২০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কমে যায়।
এরপর এমা ল্যাম্ব (৩৯ রান, ৫০ বল, ৪ চার) এবং অধিনায়ক ন্যাট সিভার ব্রান্ট (৪১ রান, ৫২ বল, ৫ চার) তৃতীয় উইকেটের জন্য ৭১ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ইনিংসটি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্নেহ রানা দু'জনকেই আউট করে ভারতকে বড় সাফল্য এনে দেন। যখন ২০.১ ওভারে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৯৭/৪, তখন ভারতীয় দলের পাল্লা ভারী হতে শুরু করে।
সোফিয়া ডাঙ্কলে এবং রিচার্ডসের লড়াইয়ের ইনিংস
এরপর ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বড় ইনিংস খেলেন সোফিয়া ডাঙ্কলে। তিনি ৯২ বলে ৮৩ রান করেন, যার মধ্যে ৯টি চার ছিল। তাঁর সঙ্গে ডেভিডসন রিচার্ডস (৫৩ রান, ৭৩ বল, ২ চার) একটি শত রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেন। সবশেষে, সোফি একলেস্টোন ২৩ রানের একটি দ্রুত ইনিংস খেলেন এবং ইংল্যান্ড দল নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান করে।
ভারতের হয়ে স্নেহ রানা ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন, অন্যদিকে ক্রান্তি গৌড়ও ৫৫ রান দিয়ে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পান। আমনজ্যোত কৌর এবং শ্রী চরণী একটি করে উইকেট পান।
ভারতের দৃঢ় সূচনা, তারপর মিডল অর্ডারের সংগ্রাম
২৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় দলের শুরুটা দুর্দান্ত ছিল। ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা এবং তরুণী প্রীতিকা রাওয়াল ৪৮ রানের একটি মজবুত জুটি গড়ে দলকে শক্তিশালী সূচনা এনে দেন। স্মৃতি মান্ধানা ২৪ বলে ২৮ রান করেন, যার মধ্যে ৫টি চার ছিল, অন্যদিকে প্রীতিকা রাওয়াল ৫১ বলে ৩৬ রান করেন এবং ৩টি চার মারেন।
এরপর হারলিন দেওল (২৭ রান, ৪৪ বল, ৪ চার) রাওয়ালের সাথে ৪৬ রানের জুটি গড়েন। তবে মিডল অর্ডারে ভারত দ্রুত উইকেট হারায়। প্রথমে রাওয়াল, তারপর দেওল এবং এরপর অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর (১৭ রান) আউট হয়ে যাওয়ায় দল কিছুটা চাপে পড়ে যায়। সেই সময় ২৭.১ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল ১২৪/৪।
দীপ্তি শর্মা এবং জেমিমা রড্রিগেজের জুটি জয় এনে দেয়
এই কঠিন পরিস্থিতিতে জেমিমা রড্রিগেজ এবং দীপ্তি শর্মা পরিস্থিতি সামলান। দুজনে মিলে ৮৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়ে ভারতকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান। জেমিমা ৫৪ বলে ৪৮ রানের একটি ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে ৫টি চার ছিল। তাঁর আউট হওয়ার পর রিচা ঘোষ অল্প রানে আউট হয়ে যান, তবে দীপ্তি শর্মা এক প্রান্ত ধরে রেখেছিলেন।
দীপ্তি শর্মা তাঁর ইনিংসে ৬৪ বলে অপরাজিত ৬২ রান করেন, যার মধ্যে ৩টি চার এবং ১টি দুর্দান্ত ছক্কা ছিল। তিনি আমনজ্যোত কৌর (২০ রান, ১৪ বল, ৩ চার)-এর সাথে জুটি বেঁধে ভারতের জন্য ১০ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেন।
ইংল্যান্ডের বোলারদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ
ইংল্যান্ডের হয়ে চার্লি ডিন সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন, যিনি ১০ ওভারে ৫২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। কেট ক্রস, সোফি একলেস্টোন এবং লরেন ফিলার ১টি করে উইকেট পান। যদিও তাঁদের প্রচেষ্টা ভারতকে থামাতে যথেষ্ট ছিল না। এই জয়ের মাধ্যমে ভারতীয় মহিলা দল লর্ডস টেস্টে পাওয়া হারের যোগ্য জবাব দিল।
সেই টেস্ট হারের পর দল শক্তিশালীভাবে ফিরে এসে ইংল্যান্ডকে তাদেরই মাঠে একদিনের ফর্ম্যাটে পরাজিত করেছে। এখন টিম ইন্ডিয়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে পরবর্তী ম্যাচ খেলতে নামবে।