থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে ভারতীয় পর্যটকদের প্রভাব: এক বিশ্লেষণ

থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে ভারতীয় পর্যটকদের প্রভাব: এক বিশ্লেষণ

২০২৪ সালে থাইল্যান্ডের অলিগলিতে ভারতীয়দের আনাগোনা ছিল যেন উৎসবের মেজাজ। শুধুমাত্র এই বছরেই ২১ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় পর্যটক থাইল্যান্ডে গিয়েছেন, যার ফলে সেখানকার হোটেল, ট্যাক্সি, রেস্তোরাঁ এবং বাজারগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। করোনার পরে যেখানে থাইল্যান্ড বিদেশি পর্যটকদের অভাবে ভুগছিল, সেখানে ভারত সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে।

চীনের অভাব পূরণ করছে ভারত

কিছু সময় ধরে চীন থেকে আসা পর্যটকদের সংখ্যায় ভারী পতন হয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া যাত্রীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গ্রীষ্মের মরসুমে অর্থাৎ জুন-জুলাই ২০২৫-এ ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী থাইল্যান্ডে গিয়েছেন। এই সময়ে চীনের ফ্লাইটগুলোতে প্রায় ১০ লক্ষ আসনের পতন নথিভুক্ত করা হয়েছিল, যা ভারত পূরণ করেছে।

২১ লক্ষ ভারতীয়, ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকার লাভ

থাইল্যান্ডের ট্যুরিজম অথরিটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতীয় যাত্রীদের থেকে ২০২৪ সালে প্রায় ১.৩৮ লক্ষ কোটি টাকা (প্রায় ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার)-এর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ লাভ হয়েছে। হোটেলে বুকিং থেকে শুরু করে ট্যাক্সি ভাড়া, স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা এবং খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরে ভারত থেকে যাওয়া টাকা থাইল্যান্ডের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।

প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব

থাইল্যান্ডে ভারতীয় পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি শুধুমাত্র পর্যটন নয়, কর্মসংস্থান এবং ছোট ব্যবসাকেও উৎসাহিত করেছে। বড় হোটেলগুলোতে ভারতীয়দের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে, ভ্রমণ সংস্থাগুলো ভারত থেকে আসা গ্রুপের জন্য নতুন প্যাকেজ তৈরি করছে। একই সাথে, বাজারগুলোতে ভারতীয় স্বাদ এবং পছন্দকে মাথায় রেখে নতুন পণ্য पेश করা হচ্ছে।

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা, ভারত নির্ভরযোগ্য অংশীদার

থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। তা মুয়েন থম মন্দিরের কাছে সম্প্রতি দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে, যেখানে গুলি বিনিময় হয় এবং কিছু প্রাণহানিও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড তার আন্তর্জাতিক সহযোগীদের কাছ থেকে বিশেষ সমর্থন আশা করে। ভারত এই মুহূর্তে থাইল্যান্ডের জন্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভারত-থাইল্যান্ড বাণিজ্যিক সম্পর্কও শক্তিশালী

পর্যটনের পাশাপাশি বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারত ও থাইল্যান্ডের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে মোট ১৬.৫১ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত প্রায় ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য থাইল্যান্ডে রপ্তানি করেছে, যেখানে ১১.৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

ভারত থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া প্রধান পণ্য

  • যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম
  • মূল্যবান পাথর এবং অলঙ্কার
  • অটোমোবাইল এবং স্পেয়ার পার্টস

থাইল্যান্ড থেকে ভারতে আসা প্রধান আমদানি

  • খাদ্য তেল
  • প্লাস্টিক এবং রাসায়নিক পণ্য
  • জৈব রাসায়নিক এবং ওষুধের কাঁচামাল

ট্যাক্সি থেকে সৈকত পর্যন্ত ভারতীয় প্রভাব

থাইল্যান্ডের বড় শহর যেমন ব্যাংকক, পত্তায়া, ফুকেট এবং চিয়াং মাই-তে এই বছর ভারতীয় পর্যটকদের উপস্থিতি কেবল হোটেল শিল্পকে পুনরুদ্ধার করেনি, বরং ট্যাক্সি চালক, স্থানীয় গাইড, দোকানদার এবং রেস্তোরাঁ মালিকদেরও প্রচুর উপার্জন করিয়েছে।

পর্যটনে ভারত কেন বিশেষ হয়ে উঠেছে

ভারত থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির তিনটি প্রধান কারণ সামনে এসেছে। প্রথম কারণ হল ভিসা-মুক্ত ভ্রমণ নীতি, যার ফলে ভারত থেকে ভ্রমণ সহজ হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হল ভারতের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী, যারা এখন বিদেশে ঘুরতে যেতে চায়। তৃতীয় কারণ হল ভারত-আসিয়ান ট্যুরিজম প্রোমোশন, যার মাধ্যমে থাইল্যান্ডকে ভারতীয় পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে প্রচার করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডে ভারতের ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসযোগ্যতা

যেখানে একদিকে এশিয়ার বাজারগুলোতে চীনের ভূমিকা কম হচ্ছে, সেখানে ভারতের অংশীদারিত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। থাইল্যান্ডের সরকার এখন ভারতের উপর ভরসা করে তাদের পর্যটন এবং বাণিজ্য পরিকল্পনা তৈরি করছে।

ভারত থাইল্যান্ডের বিদেশ নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ

কূটনৈতিক দিক থেকেও ভারত ও থাইল্যান্ডের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। সীমান্তে উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক অস্থিরতার সময়ে থাইল্যান্ড ভারতকে এমন একটি সহযোগী হিসেবে দেখে, যে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়াতে পারে।

Leave a comment