জাতিসংঘে ভারত-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর জোর

জাতিসংঘে ভারত-মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর জোর

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাক্ষাৎ করেছেন। উভয়ে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং কৌশলগত অংশীদারিত্ব জোরদার করার উপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশন: নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UNGA)-এর ৮০তম অধিবেশন চলাকালীন ভারত ও আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং উভয় দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং খনিজ পদার্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

নিউইয়র্কে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের মাঝে জয়শঙ্কর এবং রুবিওর এই সাক্ষাৎ বৈশ্বিক রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। উভয় নেতা স্বীকার করেছেন যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা সময়ের দাবি। বিশেষত ইন্দো-প্যাসিফিক (Indo-Pacific) অঞ্চলে সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের উপর রুবিওর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে ভারত আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন যে ভারত ও আমেরিকা কেবল বাণিজ্য ক্ষেত্রেই নয়, নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাতেও একে অপরের পরিপূরক। তিনি আরও যোগ করেছেন যে একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমেরিকা ভারতের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা শেয়ার করেছেন

রুবিও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম X-এও এই বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে জয়শঙ্করের সাথে বৈঠকটি ইতিবাচক ছিল এবং উভয় দেশের জন্য বাণিজ্য, জ্বালানি, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং খনিজ সম্পদ খাতে সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় যে উভয় দেশ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্তরে নতুন উচ্চতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

জয়শঙ্করের প্রতিক্রিয়া

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও এই বৈঠককে গঠনমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি X-এ লিখেছেন যে নিউইয়র্কে মার্কো রুবিওর সাথে সাক্ষাৎ ভালো হয়েছে এবং আমরা দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। জয়শঙ্কর আরও বলেছেন যে উভয় দেশ অগ্রাধিকারমূলক ক্ষেত্রগুলিতে নিরন্তর যোগাযোগ বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে।

সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পথে

ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এই বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন সম্প্রতি বাণিজ্যিক উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের রুশ তেল আমদানির প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় সম্পর্কে তিক্ততা এসেছিল। এই প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর এবং রুবিওর এই বৈঠককে সম্পর্ককে পুনরায় স্বাভাবিক করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতার গুরুত্ব

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সম্পর্কে ভারত ও আমেরিকার ভাবনা অনেকটাই একইরকম। উভয় দেশ মনে করে যে এই অঞ্চলে একটি স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ থাকা উচিত। কোয়াড (QUAD)-এর মতো মঞ্চগুলিতে ভারত ও আমেরিকা ইতিমধ্যেই সক্রিয়। এখন এই বৈঠকের পর আশা করা হচ্ছে যে ইন্দো-প্যাসিফিকে কৌশলগত সহযোগিতা আরও মজবুত হবে।

কোয়াড এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা

কোয়াড মঞ্চ, যেখানে ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া অন্তর্ভুক্ত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জয়শঙ্কর এবং রুবিওর আলোচনায় এই মঞ্চের ভূমিকার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশ স্পষ্ট করেছে যে তারা কোয়াডকে আরও কার্যকর করতে একসঙ্গে কাজ করবে।

বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের ভূমিকা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মতো মঞ্চে ভারতের সক্রিয়তা ক্রমাগত বাড়ছে। ভারত কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলির কণ্ঠস্বরই তুলছে না বরং বৈশ্বিক বিষয়গুলিতেও জোরালো মতামত রাখছে। আমেরিকার ভারতকে “অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশীদার” বলা এই কথার প্রমাণ যে আন্তর্জাতিক মঞ্চগুলিতে ভারতের ভূমিকা আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে।

Leave a comment