জগদীপ ধনখড় ‘নিখোঁজ’ পদত‍্যাগের এক মাস পরেও প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির রহস্যময় অন্তর্ধান

জগদীপ ধনখড় ‘নিখোঁজ’ পদত‍্যাগের এক মাস পরেও প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির রহস্যময় অন্তর্ধান

বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে প্রশ্ন জাগালেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি

২১ অগাস্ট শেষ হল সংসদের বাদল অধিবেশন। কিন্তু ঠিক এক মাস আগে এই অধিবেশনের শুরুর দিনেই রাজনৈতিক মহল তোলপাড় করে দিয়েছিলেন দেশের তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। অঘোষিতভাবে, একেবারেই আভাস না দিয়ে হঠাৎ পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। সেই থেকে কেটে গিয়েছে এক মাস। অথচ রাজনৈতিক মঞ্চে হোক বা সামাজিক জীবনে, কোথাও তাঁর দেখা মিলছে না।

হঠাৎ ইস্তফা, অসুস্থতার অজুহাত নাকি গোপন রহস্য?

পদত্যাগের সময় ধনখড় জানিয়েছিলেন শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি দায়িত্বে থাকতে পারছেন না। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, আসল কারণ আড়াল করা হচ্ছে। কংগ্রেসের দাবি, হঠাৎ অসুস্থতার কথা বলেই দায়িত্ব ছাড়া সাধারণ নয়, নিশ্চয়ই এর পিছনে বড় কোনও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। সংসদে রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছেন, ধনখড় সাহেব সত্যিই কি অসুস্থ? নাকি অন্য কোনো চাপ ছিল তাঁর উপর?

কংগ্রেসের পোস্টার বিতর্কে নতুন মাত্রা

কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ধনখড়কে নিয়ে সরাসরি ‘নিখোঁজ’ পোস্টার ছাপিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সেখানে লেখা— ‘‘ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি কোথায়?’’ এই পোস্টার ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন— কেন তিনি নীরব? কেন তাঁর প্রকাশ্যে আসা হচ্ছে না?

নতুন নির্বাচনে ব্যস্ত রাজনীতি, অথচ প্রশ্ন একই

এদিকে ধনখড়ের উত্তরসূরী বেছে নিতে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ময়দানে তীব্র উত্তেজনা। এনডিএ-র প্রার্থী হিসেবে সামনে এসেছেন সিপি রাধাকৃষ্ণণ। অন্যদিকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট মনোনীত করেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডিকে। দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, ভোটের পরিবেশ ঘন হচ্ছে। কিন্তু এই উত্তেজনার মধ্যেও একটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে— সদ্য প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি কোথায়?

এক মাস ধরে জনসমক্ষে নেই ধনখড়

রাজনীতির এমন উত্তাল আবহে এক মাস ধরে একেবারেই জনসমক্ষে দেখা যায়নি ধনখড়কে। কোথাও বক্তৃতা নয়, কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নয়, এমনকি সামাজিক মাধ্যমে একটি শব্দও নেই। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য হলো, তাঁর অফিসিয়াল ‘এক্স’ (টুইটার) অ্যাকাউন্টটিও হঠাৎ গায়েব হয়ে গেছে।

সাংসদদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগও মিলছে না

একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট জানাচ্ছে, একাধিক সাংসদ তাঁর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি ব্যক্তিগত সচিবের মাধ্যমে সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। ধনখড়ের ঘনিষ্ঠ প্রশাসনিক সূত্র পর্যন্ত কিছু জানাতে পারছে না। ফলে তাঁর অবস্থান নিয়ে রহস্য আরও গাঢ় হচ্ছে।

সরকারি বাংলোতে এখনও প্রবেশ করেননি

উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে আসার পর কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে দিল্লির এপিজে আবদুল কালাম রোডে ৩৪ নম্বর টাইপ–৮ বাংলো বরাদ্দ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগের এক মাসের মধ্যে প্রাক্তন পদাধিকারীদের সরকারি বাসভবন খালি করে নতুন বাড়িতে ওঠা উচিত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এখনও পর্যন্ত সেই বাংলোতে প্রবেশ করেননি ধনখড়।

নজিরবিহীন পদত্যাগ, আরও রহস্য ঘনীভূত

ভারতের ইতিহাসে এর আগে কোনও উপরাষ্ট্রপতি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে পদত্যাগ করেননি। ধনখড় সেই রেকর্ড গড়েছেন। অথচ পদত্যাগের পর কোথাও তাঁর অবস্থান সম্পর্কে সরকারিভাবে কোনও তথ্য নেই। উন্নয়ন মন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলো প্রস্তুত হলেও তিনি কোনও যোগাযোগ করেননি। ফলে জল্পনা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

অদ্ভুত নীরবতা, রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ প্রবল

দেশের রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন একটাই— ধনখড় আসলে কোথায়? শারীরিক অসুস্থতা কি সত্যিই এত গুরুতর, নাকি অন্য কোনো কারণে তাঁকে আড়ালে রাখা হচ্ছে? বিরোধীরা দাবি তুলেছে, সাধারণ মানুষ এবং সংসদ দু’পক্ষের কাছেই এ বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য প্রকাশ করা উচিত।

উত্তরসূরী নির্বাচনের মাঝেই রহস্যের প্রলেপ

যখন দেশ নতুন উপরাষ্ট্রপতি বেছে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে, তখনই প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতিকে ঘিরে এই রহস্য রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করছে। নির্বাচনের লড়াইয়ের ভিড়ে প্রশ্নটা স্পষ্ট— জগদীপ ধনখড় কি সত্যিই নিখোঁজ? নাকি তিনি নিজেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে নীরব থেকেছেন? উত্তর সময়ই দেবে, তবে আপাতত প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতিকে ঘিরে অস্বস্তি এবং জল্পনার পারদ চড়ছে ক্রমেই।

Leave a comment