জয়পুর-মুম্বই ট্রেনে 'জয় মাতা দি' বলতে বাধ্য করার ঘটনা: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চাঞ্চল্যকর সাক্ষ্য

জয়পুর-মুম্বই ট্রেনে 'জয় মাতা দি' বলতে বাধ্য করার ঘটনা: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চাঞ্চল্যকর সাক্ষ্য

জয়পুর-মুম্বই ট্রেন গুলিবিদ্ধ কাণ্ডে বরখাস্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং যাত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে বোরখা পরার কারণে রাইফেল তাক করে ‘জয় মাতা দি’ বলার জন্য তাকে বাধ্য করা হয়েছিল।

মুম্বই: ৩১ জুলাই ২০২৩ তারিখে জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেস ট্রেনে ঘটে যাওয়া গুলিবিদ্ধের ঘটনা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই মামলায় বরখাস্ত আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিংয়ের বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যা এবং যাত্রীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আদালতে চলমান শুনানিতে এক প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা সাক্ষ্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে চেতন তাঁর দিকে রাইফেল তাক করে ‘জয় মাতা দি’ বলতে বাধ্য করেছিল। এই সাক্ষ্য ঘটনার পূর্ব পরিকল্পনা এবং অভিযুক্তের আচরণ বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বোরখা পরিহিত মহিলার উপর রাইফেল তাক

প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা জানিয়েছেন যে ৩০ জুলাই ২০২৩ রাতে তিনি তাঁর দুই সন্তান সহ রতলাম থেকে মুম্বাই যাচ্ছিলেন। তাঁরা অনুপপুর-মুম্বই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের ৮১৩ নম্বর কোচে বসেছিলেন। সকাল প্রায় ৫:৩০ মিনিটে, যখন মহিলাটি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে এবং কাপড় পরিবর্তন করতে যাচ্ছিলেন, তখনই চেতন সিং তাঁর অস্ত্র সহ মহিলাটির কামরায় প্রবেশ করে।

মহিলাটি অভিযোগ করেন যে চেতন তাঁর দিকে রাইফেল তাক করে বলেছিল যে যদি সে ‘জয় মাতা দি’ না বলে তবে তাকে গুলি করা হবে। ভয়ের কারণে মহিলাটি তাই বলেছিল, কিন্তু চেতন জোর দিয়ে এটি পুনরাবৃত্তি করতে বলে। মহিলাটি সাহস সঞ্চয় করে রাইফেলের মুখ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, চেতন পিছিয়ে যায় এবং হুমকি দিয়ে অন্য কামরার দিকে চলে যায়।

যাত্রী ও কর্মকর্তাদের উপর হামলা

প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে চেতন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্য তিন যাত্রীর উপর গুলি চালায়, যার ফলে কামরায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা চেন টেনে ট্রেনটি মীরা রোড স্টেশনে থামাতে সক্ষম হয় এবং চেতন সিংকে গ্রেফতার করা হয়।

এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয় যে চেতন সিং পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল এবং যাত্রীদের ভয় দেখিয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ঘটনার আগে অভিযুক্তের আক্রমণাত্মক এবং নিয়ন্ত্রিত আচরণ প্রকাশ করেছে।

আদালতে মহিলার সাক্ষ্য

আদালতে মহিলা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন কিভাবে চেতন তাঁকে ভয় দেখিয়ে ‘জয় মাতা দি’ বলতে বাধ্য করেছিল। সাক্ষ্য থেকে এও জানা গেছে যে এই মামলায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্য এবং ব্যক্তিগত পূর্ব-পরিকল্পনার প্রশ্নও উঠছে। আদালত প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে এবং এটিকে তদন্ত প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বর্তমানে মামলার শুনানি চলছে এবং বহু প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হচ্ছে। চেতন মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দাবি করেছে, কিন্তু তার জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। আদালত তদন্ত করছে যে গুলিবিদ্ধ এবং যাত্রীদের হুমকি দেওয়ার পিছনে আসল উদ্দেশ্য কী ছিল।

Leave a comment