পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি চীনের একটি গোপন সামরিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। তাঁকে J-10, J-20 এবং JF-17 থান্ডার যুদ্ধবিমান ও উন্নত ড্রোন দেখানো হয়েছে। উভয় দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক: পাকিস্তান ও চীনের সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ। চীন নিজেকে পাকিস্তানের "সর্বদা বন্ধু" বলে অভিহিত করে এবং দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্রমাগত গভীর হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির চীন সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
জারদারি ১০ দিনের চীন সফরে এসেছেন এবং এই যাত্রার সময় তাকে একটি গোপন সামরিক কেন্দ্র (Secret Military Complex) পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই পরিদর্শন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি প্রথমবার যখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে এই কেন্দ্রটি দেখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গোপন সামরিক কেন্দ্রে কী হয়েছিল
জারদারিকে চীনের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অফ চায়না (AVIC) -এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখানে তাঁকে চীনের সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল যুদ্ধবিমান, ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এবং কমান্ড সিস্টেম।
পাকিস্তানি মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, রাষ্ট্রপতি জারদারিকে চীনের এভিয়েশন প্রযুক্তি এবং যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছিল। এটিও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে পাকিস্তান ও চীন ভবিষ্যতে একসাথে আরও উন্নত অস্ত্র তৈরি করবে।
জারদারিকে যে অস্ত্রগুলো দেখানো হয়েছিল
জারদারিকে চীনের বেশ কয়েকটি উন্নত সামরিক প্রযুক্তি এবং অস্ত্রের প্রদর্শনী দেখানো হয়েছিল। এর মধ্যে প্রধানগুলো ছিল:
- J-10 ফাইটার জেট – চীনের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যা কিনতে পাকিস্তানও আগ্রহ দেখিয়েছে।
- JF-17 থান্ডার – পাকিস্তান ও চীনের যৌথ প্রকল্প, যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতীক।
- J-20 স্টিলথ ফাইটার জেট – চীনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, যা দেখে বিশ্বের অনেক সেনাবাহিনীই অবাক।
- আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেলস (UAVs) অর্থাৎ উন্নত ড্রোন, যা নজরদারি এবং মাল্টি-মিশন অপারেশনে ব্যবহৃত হয়।
- সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইউনিট এবং সমন্বিত কমান্ড ও কন্ট্রোল সিস্টেম, যা আধুনিক যুদ্ধের সময় রিয়েল-টাইম সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
জারদারি এই অনুষ্ঠানে চীনের সাথে যৌথ প্রতিরক্ষা উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে পাকিস্তান চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে তার সামরিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে।
চীনের প্রতিক্রিয়া
যদিও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারদারির এই সফরকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। সরকারি বিবৃতিতে চীন কেবল বলেছে যে তারা গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (GSI) কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। GSI হলো চীনের সেই নিরাপত্তা নীতি, যা আমেরিকার "গ্লোবাল ডমিনেশন পলিসি"-র জবাব হিসেবে বিবেচিত হয়।
চীন জারদারির বক্তব্য এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। এটি চীনের একটি পুরানো নীতি যে তারা জনসমক্ষে পাকিস্তানের সাথে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে বেশি খোলামেলাভাবে কথা বলে না।
আসীম মুনিরের সাম্প্রতিক চীন সফর
জারদারির আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আসিফ মুনিরও চীন সফরে গিয়েছিলেন। ভারতের অপারেশন সিনদুর-এর পরে তাঁর এই সফর আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল। রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বর্তমানে বড় ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে এবং চীনের সাহায্যে তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা উন্নত করতে চাইছে।
ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের पहलगाम-এ সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ৭ই মে অপারেশন সিনদুর শুরু করেছিল। এই অভিযানে পাকিস্তান ও पीओके (পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর) -এ অবস্থিত সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোকে নিশানা করা হয়েছিল।