জন্মাষ্টমী: বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার নিয়ম ও প্রস্তুতি

জন্মাষ্টমী: বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার নিয়ম ও প্রস্তুতি

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মোৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। এই বছর জন্মাষ্টমী ১৬ই অগাস্ট তারিখে পড়েছে। রাত ১২টার পরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের বিশেষ মুহূর্ত থাকবে, তাই ভক্তরা সারাদিন উপবাস রাখেন এবং রাতে ভগবানের জন্ম হওয়ার পরে পূজা-অর্চনা করে তাঁকে দোলনায় দোল দেন।

পুরো দেশে হয় জমকালো প্রস্তুতি

মন্দিরগুলিতে বিশেষ সজ্জা হয়, শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং রাসলীলার আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে, বাড়িতেও ভক্তরা শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে বাল গোপালের পূজা করেন। আপনিও যদি এই বছর বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালন করছেন, তাহলে আগে থেকে পূজার প্রস্তুতি সেরে নেওয়া দরকার। এর জন্য পূজার থালা থেকে শুরু করে সাজসজ্জার জিনিস এবং দোলনা সবকিছু সময়ের আগে জোগাড় করে রাখা উচিত।

বাড়িতে পূজার জন্য কী কী সামগ্রীর প্রয়োজন হবে

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মূর্তি বা ছবি

প্রথমত, আপনার বাল গোপালের একটি সুন্দর মূর্তি বা ছবি দরকার হবে। এটি পীতাম্বর পরিহিত এবং বাঁশি বাজানো অবস্থায় হওয়া উচিত। যদি আপনার কাছে লাড্ডু গোপালের প্রতিমা থাকে, তাহলে সেটি দোলনায় স্থাপন করা যেতে পারে।

চৌকি এবং লাল কাপড়

মূর্তি স্থাপনের জন্য একটি চৌকি নিন এবং তার উপরে পরিষ্কার লাল বা হলুদ রঙের কাপড় বিছান। এই চৌকিটি পূজা স্থলে রাখতে হবে এবং জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।

পূজার থালা এবং অন্যান্য সামগ্রী

পূজার থালায় অক্ষত, কুমকুম, হলুদ, চন্দন, রোli, গঙ্গাজল, শুদ্ধ জল, প্রদীপ, ধূপকাঠি, তুলো, কর্পূর এবং আগরবাতি রাখুন। এছাড়াও, একটি ছোট ঘড়া বা কলস, যাতে জল ভরা থাকে, সেটিও কাছে রাখুন।

ভোগের জন্য মিষ্টি এবং পঞ্চামৃত

শ্রীকৃষ্ণকে মাখন, মিছরি, দই, পঞ্জিরি এবং লাড্ডু নিবেদন করা হয়। এছাড়াও, পঞ্চামৃত তৈরি করুন যাতে দই, দুধ, মধু, ঘি এবং চিনি মেশানো থাকে। এই পঞ্চামৃত ভগবানকে স্নান করানোর জন্যেও ব্যবহার করা হয়।

বাল গোপালের জন্য দোলনা

বাল গোপালের জন্য একটি দোলনা অবশ্যই নিন। এটিকে ফুল এবং রঙিন কাপড় দিয়ে সাজান। ভগবানকে দোলনা দেওয়ার পরম্পরা জন্মাষ্টমীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতিগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়।

এভাবে পূজার শুরু করুন

পূজা স্থলের পরিচ্ছন্নতা দিয়ে শুরু করুন

১৬ই অগাস্ট সকালে স্নান করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করুন। বাড়িতে যে স্থানে আপনি ভগবানের পূজা করতে চলেছেন, সেই জায়গাটি গঙ্গাজল বা শুদ্ধ জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। সেখানে চৌকি রাখুন এবং তার উপরে লাল বা হলুদ রঙের কাপড় বিছান।

মূর্তি স্থাপন করুন

এবার বাল গোপালের মূর্তিটি কাপড় দিয়ে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করুন এবং পঞ্চামৃত দিয়ে স্নান করান। এর পরে ভগবানকে নতুন বস্ত্র পরান, তাঁকে সাজসজ্জা করুন এবং দোলনায় বসান।

আরতি এবং মন্ত্রোচ্চারণ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার সময় "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়" বা "ওঁ ক্লীং কৃষ্ণায় নমঃ" মন্ত্র জপ করুন। সেইসাথে তুলসী পাতা, ফুল, ভোগ ও প্রদীপ অর্পণ করুন। শেষে ভগবানের আরতি করুন এবং ভোগ নিবেদন করুন।

মধ্যরাতে জন্ম সময়ে বিশেষ পূজা

রাত ১২টার সময়কে বিশেষ শুভ মুহূর্ত মানা হয়, কারণ মনে করা হয় যে এই সময়েই শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এই সময় সংকীর্তন করুন, শঙ্খ বাজান, ঘণ্টা এবং কাঁসর বাজিয়ে কৃষ্ণ জন্মের খুশি উদযাপন করুন।

ভোগ বিতরণ এবং প্রসাদ

পূজার পরে ভগবানকে নিবেদন করার জন্য মাখন, মিছরি, লাড্ডু, ফল এবং পঞ্চামৃত রাখুন। এর পরে এই প্রসাদ বাড়ির সকলের মধ্যে বিতরণ করুন এবং যারা উপবাস করেছেন তারা পরের দিন পারণ করুন।

পূজায় ध्यान রাখার বিষয়

পূজার সময় খেয়াল রাখবেন যেন শুদ্ধতা বজায় থাকে এবং পূজায় আন্তরিক অনুভূতি থাকে। বাড়ির বাচ্চারাও এই পূজায় অংশ নিলে তাদের উৎসাহ এবং শ্রদ্ধাও বৃদ্ধি পায়।

দেশজুড়ে জোর কদমে প্রস্তুতি

কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নিয়ে বাজারগুলোতেও বেশ ভিড় দেখা যাচ্ছে। মন্দিরগুলোর সাজসজ্জা, ঝাড়বাতির প্রস্তুতি এবং ভজন মণ্ডলীর রিহার্সাল এখনই শুরু হয়ে গেছে। মানুষজন বাড়িতে সাজানোর আলো, দোলনা এবং সাজসজ্জার সামগ্রী কেনাকাটা করা শুরু করে দিয়েছেন। এইবারও জন্মাষ্টমীর উৎসব পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হবে।

Leave a comment