ভারতের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি সূর্যকান্ত, ২০২৫-এর ২৪ নভেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ

ভারতের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি সূর্যকান্ত, ২০২৫-এর ২৪ নভেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ
সর্বশেষ আপডেট: 6 ঘণ্টা আগে

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম বিচারপতি সূর্যকান্ত দেশের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি (CJI) হবেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন। বিচারপতি সূর্যকান্ত ২০২৫ সালের ২৪ নভেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।

নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বিচারপতি সূর্যকান্তকে ভারতের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তিনি ২৪ নভেম্বর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের কার্যকাল ২৩ নভেম্বর শেষ হবে। কেন্দ্রীয় আইন ও বিচার মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই নিয়োগের তথ্য জানিয়ে বিচারপতি সূর্যকান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিচারপতি সূর্যকান্ত দেশের ৫৩তম প্রধান বিচারপতি হবেন এবং তাঁর কার্যকালে বিচার বিভাগে নতুন দিকনির্দেশনা ও শক্তি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিচারপতি সূর্যকান্তের নিয়োগে সরকারের অনুমোদন

কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লিখেছেন, ভারতের সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে, রাষ্ট্রপতি মহাশয় বিচারপতি সূর্যকান্তকে ২০২৫ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। আমি তাঁকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই। বিচারপতি সূর্যকান্তের কার্যকাল প্রায় ১৫ মাসের হবে। তিনি ২০২৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণ করবেন।

বিচারপতি সূর্যকান্তের বিচারিক যাত্রা

বিচারপতি সূর্যকান্ত ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার হিসার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা সূর্যকান্ত তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা হরিয়ানাতেই গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে আইন অনুশীলন শুরু করেন এবং পরে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে তাঁর আইনি কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ২০০৪ সালে হরিয়ানার অ্যাডভোকেট জেনারেল হন এবং ২০০৭ সালে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালের ২৪ মে তাঁকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টে তাঁর কার্যকালে তিনি অনেক ঐতিহাসিক রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর রায় বিচারিক স্বচ্ছতা, সমতা, সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পরিচিত।

গুরুত্বপূর্ণ রায় ও অবদান

  • রাজদ্রোহ আইন (Sedition Law): বিচারপতি সূর্যকান্ত সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন, যেটি ঔপনিবেশিক আমলের রাজদ্রোহ আইন (Section 124A IPC)-এর উপর স্থগিতাদেশ জারি করে নির্দেশ দিয়েছিল যে সরকারের পর্যালোচনা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এর অধীনে কোনো নতুন এফআইআর নথিভুক্ত করা যাবে না। এই রায় নাগরিক স্বাধীনতার দিকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • পেগাসাস স্পাইওয়্যার মামলা (Pegasus Spyware Case): তিনি সেই বেঞ্চে ছিলেন যা পেগাসাস গুপ্তচরবৃত্তির মামলার তদন্তের জন্য সাইবার বিশেষজ্ঞদের একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটিকে বিচারিক তত্ত্বাবধানে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাতে নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়।
  • আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (AMU) মামলা: বিচারপতি সূর্যকান্ত সাত বিচারপতির সেই ঐতিহাসিক বেঞ্চের অংশ ছিলেন, যা ১৯৬৭ সালের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রায়ের পুনর্বিবেচনার অনুমতি দিয়েছিল, যা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যালঘু মর্যাদা নিয়ে বিতর্কের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করে।
  • ওয়ান র্যাঙ্ক-ওয়ান পেনশন (OROP): তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ওয়ান র্যাঙ্ক-ওয়ান পেনশন প্রকল্পকে সাংবিধানিকভাবে বৈধ ঘোষণা করেন। তাঁর রায় লক্ষ লক্ষ প্রাক্তন সৈনিকের স্বার্থ রক্ষা করেছে।
  • নারীদের জন্য সংরক্ষণের উদ্যোগ: সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দেওয়ার কৃতিত্বও বিচারপতি সূর্যকান্তের। এই পদক্ষেপ বিচারিক ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার দিকে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
  • নির্বাচনী স্বচ্ছতায় কঠোরতা: তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিহারে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ৬৫ লক্ষ নামের বিবরণ প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর বার্তা দেয়।
  • প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা লঙ্ঘন তদন্ত (Punjab PM Security Breach): তিনি সেই বেঞ্চেরও অংশ ছিলেন, যা ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঞ্জাব সফরের সময় নিরাপত্তায় ত্রুটির তদন্তের জন্য বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রার সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। তিনি বলেছিলেন যে এমন মামলায় “বিচারিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মন”-এর প্রয়োজন হয়।

ভারতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। ঐতিহ্যগতভাবে, সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে প্রবীণ বিচারপতিকেই দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি করা হয়। বর্তমান প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই সরকারে বিচারপতি সূর্যকান্তের নাম সুপারিশ করেছিলেন, যার পরে রাষ্ট্রপতি তাঁর নিয়োগে অনুমোদন দেন।

Leave a comment