কালিনিনগ্রাদ-এর উপর হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে, ন্যাটোকে কড়া হুঁশিয়ারি রাশিয়ার। পুতিনের ঘনিষ্ঠ পাত্রুশেভ বলেছেন - এই অঞ্চল রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের অংশ এবং যে কোনও মূল্যে এর সুরক্ষা করা হবে।
Russia-NATO Warning: রাশিয়া ও ন্যাটো-র মধ্যে উত্তেজনা ফের একবার চরমে পৌঁছেছে। রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে, বিশেষ করে আমেরিকা ও ন্যাটোকে স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে এর ফল ভয়ংকর হবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ এবং নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেছেন, যদি এই অঞ্চলের উপর কোনো প্রকার সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত কঠোর এবং স্মরণীয় হবে।
কালিনিনগ্রাদের গুরুত্ব কী
কালিনিনগ্রাদ রাশিয়ার একটি বিশেষ এবং কৌশলগত অঞ্চল যা ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই অঞ্চলটি পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মধ্যে অবস্থিত এবং ন্যাটো দেশগুলোর প্রভাব ক্ষেত্রের মাঝে পড়ে। এই কারণে এটি রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কালিনিনগ্রাদের উপর যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের অর্থ হল সরাসরি রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের উপর হামলা। এই কারণেই রাশিয়া এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছে।
ন্যাটো জেনারেলের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ রাশিয়া
সম্প্রতি একজন মার্কিন জেনারেল কালিনিনগ্রাদ নিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ায় রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছে। ওই বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, এই অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ইউরোপের নিরাপত্তা আরও ভালো করা যেতে পারে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, আমেরিকা বা ন্যাটো সেনারা কালিনিনগ্রাদকে নিশানা করলে তার সরাসরি অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু।
রাশিয়ার আক্রমণাত্মক হুঁশিয়ারি
নিকোলাই পাত্রুশেভ স্পষ্ট করে বলেছেন যে কালিনিনগ্রাদের উপর হামলা রাশিয়ার অখণ্ডতার উপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর জবাব ঐতিহ্যগতভাবে নয়, বরং পারমাণবিক স্তরে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, কালিনিনগ্রাদের দিকে চোখ তোলারও চেষ্টা করবেন না, কারণ আমাদের পাল্টা আঘাত এমন হবে যা ইতিহাস চিরকাল মনে রাখবে।
সুওয়ালকি গ্যাপ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
কালিনিনগ্রাদের কাছেই অবস্থিত সুওয়ালকি গ্যাপ, যা প্রায় ৬০ মাইল দীর্ঘ এবং বাল্টিক দেশগুলোকে বাকি ন্যাটো দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে। যদি রাশিয়া এই গ্যাপ দখল করে নেয়, তবে এটি ন্যাটো-র জন্য বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা করছে যে রাশিয়া এই অঞ্চল ব্যবহার করে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে পারে।
কালিনিনগ্রাদের ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান শহর কোনিগসবার্গ এবং তার আশেপাশের অঞ্চল সোভিয়েত ইউনিয়নকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কালিনিনগ্রাদ রাখা হয়। আজ এটি রাশিয়ার একটি এক্সক্লেভ যা মূল ভূখণ্ড থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১৫,১০০ বর্গকিলোমিটার এবং এটি সম্পূর্ণরূপে রাশিয়ার সামরিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাড়ছে উত্তেজনা
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে ক্রমাগত সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এতে রাশিয়া আগেই ক্ষুব্ধ। এখন যখন কালিনিনগ্রাদের মতো সংবেদনশীল অঞ্চল নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে, তখন রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হয়েছে।
ট্রাম্প, জেলেনস্কি এবং আমেরিকার ভূমিকা
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে আমেরিকাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছিল, যেখানে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কিও উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিংটি যুদ্ধ বন্ধ করার দিকে একটি প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু এটি একটি উত্তপ্ত বিতর্কে পরিণত হয়। জেলেনস্কি ট্রাম্পকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে ইউক্রেন পিছিয়ে যাবে না এবং আমেরিকার উচিত তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।