প্রেম একটি সুন্দর অনুভূতি, যা দু'জন মানুষকে একত্রিত করে। কিন্তু যখন এই অনুভূতি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং তার সাথে স্বার্থপরতা যুক্ত হয়, তখন এই প্রেমই কারো জীবনকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে। এই গল্পটি এমন এক স্ত্রীর, যে তার স্বামীর প্রেম পাওয়ার জন্য এমন একটি পথ বেছে নিয়েছিল, যা সমাজ এবং মানবতা উভয়েই প্রত্যাখ্যান করে — কালো জাদু।
একটি সাধারণ বিবাহ, অসাধারণ উদ্দেশ্য
রিনার বিয়ে হয়েছিল মোহনের সঙ্গে, যে ছিল একজন সরল ও মায়ের প্রতি অত্যন্ত অনুগত মানুষ। সে তার মায়ের সব কথা শুনত, তাঁর খুব খেয়াল রাখত। প্রথমে রিনার এই সব ভালো লেগেছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তার মনে হতে শুরু করল যে, তার স্বামী তাকে ততটা গুরুত্ব দেয় না যতটা তার মাকে দেয়। এই ভেবে সে परेशान থাকতে শুরু করল এবং ধীরে ধীরে তার মনে ঈর্ষা ও বিরক্তি বাড়তে লাগল।
স্ত্রীর ঈর্ষা: মায়ের থেকে পাওয়া স্নেহ সহ্য করতে না পারা
রিনার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল যে তার স্বামী মোহন প্রতিটা বিষয়ে তার মায়ের পরামর্শ নেয় এবং প্রতিটি ঝগড়ায় মায়ের পক্ষ নেয়। তার মনে হতে লাগল, যতক্ষণ মা তাদের সাথে আছে, ততক্ষণ সে স্বামীর মনে সম্পূর্ণ জায়গা করে নিতে পারবে না। রিনার মনে হতে লাগল, যদি মোহনের মা তাদের মাঝ থেকে চলে যায়, তবে মোহন কেবল তাকেই ভালোবাসবে এবং তার কথাই শুনবে। এই চিন্তা ধীরে ধীরে রিনার মনে ঈর্ষা ও নেতিবাচক অনুভূতিগুলো আরও বাড়িয়ে তুলল এবং সে এমন একটি পথ বেছে নিল যা যে কারও জীবনকে ধ্বংস করতে পারে।
তান্ত্রিকের সাথে সাক্ষাৎ: ভুল পথের সূচনা
একদিন, রিনা তার এক প্রতিবেশীর পরামর্শে এক তান্ত্রিকের কাছে গেল এবং তার সব সমস্যা খুলে বলল। সে বলল, তার স্বামী সবসময় তার মায়ের কথা শোনে এবং তাকে উপেক্ষা করে। সে চেয়েছিল তার স্বামী কেবল তাকেই ভালোবাসুক এবং তার সব কথা মানুক। তান্ত্রিক রিনাকে বলল, এর একটাই উপায় — কালো জাদু। সে রিনাকে কিছু বিশেষ জিনিস দিল, যেমন সুতো, ছাই এবং একটি বিশেষ মন্ত্রযুক্ত জল, এবং বুঝিয়ে দিল কিভাবে এগুলো মোহনের উপর ব্যবহার করতে হবে, যাতে সে মায়ের থেকে দূরে চলে যায় এবং শুধুমাত্র রিনার হয়ে যায়। এখান থেকেই শুরু হলো এক ভুল পথের যাত্রা।
কালো জাদুর প্রভাব: মা-ছেলের সম্পর্কে ফাটল
রিনা তান্ত্রিকের দেওয়া সব টোটকা মোহনের উপর ব্যবহার করতে শুরু করল। কয়েকদিনের মধ্যেই তার প্রভাব দেখা যেতে লাগল। মোহনের আচরণ আগের থেকে একদম বদলে গেল। সে ছোটখাটো বিষয়েও তার মায়ের উপর রেগে যেত, তাদের এড়িয়ে চলত এবং তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করল। যেখানে সে আগে মায়ের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলত, এখন তার সামনে বসতেও কুণ্ঠা বোধ করত। তার মা বুঝতে পারছিলেন না, কেন তার আদরের ছেলেটা হঠাৎ এত বদলে গেল।
এখন মোহনের বেশিরভাগ সময় রিনার সাথে কাটতে লাগল। সে রিনার সব কথা মানতে শুরু করল এবং মায়ের কথা উপেক্ষা করতে লাগল। রিনার মনে হতে লাগল, তার করা কালো জাদু কাজ করছে এবং এখন তার স্বামী সম্পূর্ণভাবে তারই হয়ে গেছে। কিন্তু সে বুঝতে পারল না যে এই জাদুর প্রভাবে একটা গভীর ঝড় আসছে, যা তাদের পুরো পরিবারকে নাড়িয়ে দেবে।
মায়ের কষ্ট ও সন্দেহ
মোহনের মা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলেন যে, বাড়ির পরিবেশ আগের মতো নেই। তার ছেলে অনেক বদলে গেছে এবং বৌমা রিনার আচরণও অদ্ভুত ও রহস্যজনক লাগছিল। তাদের সন্দেহ হল যে কিছু একটা ভুল হচ্ছে, তাই তারা এক পণ্ডিতকে বাড়িতে ডাকলেন। পণ্ডিত ঘরটি পরীক্ষা করে বললেন যে, সেখানে নেতিবাচক শক্তি রয়েছে এবং কেউ কালো জাদু করেছে। যখন মা রিনাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, তখন সে খুব রেগে গেল এবং মোহনকে বোঝাতে লাগল যে তার মা মিথ্যা কথা বলছেন এবং তার উপর মিথ্যে অভিযোগ করছেন। এতে মা ও ছেলের মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়ে গেল।
সত্যের উন্মোচন: যখন সব প্রকাশিত হল
একদিন মোহন হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। তার চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার দেখানো হল, কিন্তু কেউই তার আসল রোগ ধরতে পারলেন না। তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে শুরু করল। তখন তার মা এক অভিজ্ঞ তান্ত্রিকের পরামর্শ নিলেন। তান্ত্রিক গভীর ভাবে ঘরটি পরীক্ষা করে পরিষ্কারভাবে বললেন যে, মোহনের উপর কালো জাদু করা হয়েছে। যখন ঘর তল্লাশি করা হল, তখন রিনার ঘর থেকে কিছু অদ্ভুত জিনিস পাওয়া গেল – যেমন ছাই, তাবিজ, এবং তন্ত্রের সাথে জড়িত সরঞ্জাম – যা থেকে পুরো সত্যটা সামনে চলে এল।
যখন মোহন জানতে পারল যে, এসব কিছু তার স্ত্রী রিনা করেছে, যাতে সে তার মায়ের থেকে দূরে চলে যায় এবং কেবল তাকেই ভালোবাসে, তখন তার হৃদয় ভেঙে গেল। যাকে সে সবচেয়ে বেশি চেয়েছিল, সেই তার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, এটা জেনে সে খুব দুঃখ পেল। সে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, যে স্ত্রী তার ঘর বাঁধার কথা, সেই কিনা তার জীবনকে ধ্বংস করার কারণ হয়ে দাঁড়াল।
এই গল্প থেকে আমরা এই সহজ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা পাই যে, প্রেম ও সম্পর্কের মধ্যে জোর করে কিছু করা বা প্রতারণার কোনো স্থান নেই। যদি কোনো সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা হয়, তবে তার সমাধান আলোচনা, বোঝাপড়া এবং ধৈর্যের মাধ্যমে করতে হবে, তন্ত্র-মন্ত্র বা কালো জাদুর মতো ভুল পথের আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। এমনটা করলে কেবল সম্পর্কগুলোই ভাঙে না, বরং বিশ্বাস ও সম্মানও চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যায়। আসল প্রেম সেটাই, যা কোনো চাপ ছাড়াই, খাঁটি মন থেকে করা হয়।