লোকসভা থেকে পদত্যাগ, দলনেত্রীর সিদ্ধান্তেই আরও কোণঠাসা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
তৃণমূলের মুখ্যসচেতক পদ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা গ্রহণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই সিদ্ধান্তেই রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—কল্যাণের অনুযোগের প্রতি সহানুভূতির চেয়ে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিই বেছে নিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। বেশ কিছু দিন ধরেই কল্যাণ দলীয় অন্দরে একাধিক ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন, বিশেষত লোকসভায় সমন্বয়ের অভাব ও সহকর্মী মহুয়া মৈত্রর সঙ্গে তীব্র মনোমালিন্য নিয়ে।
‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে দলনেত্রীকে ট্যাগ করলেন কল্যাণ, ইঙ্গিতপূর্ণ এক্স পোস্টে আলোড়ন
ইস্তফা গ্রহণের সরকারি ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। লেখেন, “আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ।” ওই পোস্টে সরাসরি ট্যাগ করা হয় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসকে। এই পোস্টে সংযমী ভাষার আড়ালে চাপা ক্ষোভ ও বিদ্রুপের সুর অনুভব করছে রাজনৈতিক মহল।
ভার্চুয়াল বৈঠকের পরেই পদত্যাগ, সমন্বয়হীনতা ও আক্রমণের অভিযোগ তুলেছিলেন কল্যাণ
সোমবার দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার সাংসদদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে খবর। কল্যাণের বক্তব্য, এই অভিযোগ পরোক্ষভাবে তাঁর দিকেই ইঙ্গিত করে। একই সঙ্গে তিনি মহুয়া মৈত্রর ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগও আনেন, এবং বলেন, দল কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। সেই কারণে নিজের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
মানভঞ্জনের রাস্তা নয়, বরং স্পষ্ট বার্তা দিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, লোকসভায় দলের নতুন দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়েছে। অভিষেক ৭ অগস্ট দিল্লিতে এসে তাঁর বক্তব্য শুনবেন—এই আশাও প্রকাশ করেছিলেন। তবে তার আগেই দলনেত্রীর তরফে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নেওয়াটা দলীয় কৌশলের বড় মোড় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ভবিষ্যতের আলোচনা বা সমঝোতার দরজা আপাতত বন্ধ বলেই ধারণা।
রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট, পরিবর্তনের হাওয়ায় হোঁচট খাচ্ছেন তৃণমূলের সিনিয়র সাংসদ
দলনেত্রী যেভাবে কল্যাণের আবেদনকে পাশ কাটিয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ করলেন, তাতে স্পষ্ট হল—তৃণমূল এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক নতুন, তুলনামূলক কড়া ও সংগঠিত রূপে এগোতে চাইছে। সিনিয়র নেতাদের ‘স্বাতন্ত্র্য ভাবনা’কে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জায়গা আপাতত আর নেই। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরমহলে।