প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দিল্লিতে কর্তব্য ভবন-৩ এর উদ্বোধন করবেন। এতে স্বরাষ্ট্র, বিদেশ সহ একাধিক মন্ত্রক স্থানান্তরিত হবে। নর্থ ও সাউথ ব্লক 'যুগে যুগে ভারত' মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হবে।
Kartavya Bhavan-3: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দিল্লির কর্তব্য পথে দেশের প্রথম ‘কর্তব্য ভবন’-এর উদ্বোধন করবেন। এই ভবন সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অধীনে তৈরি হওয়া ১০টি নতুন কেন্দ্রীয় ভবনের মধ্যে প্রথম। কর্তব্য ভবন-৩ এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক সহ একাধিক বড় মন্ত্রক স্থানান্তরিত করা হবে। এর সাথে নর্থ ও সাউথ ব্লক-কে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হবে। নতুন এই ভবন অত্যাধুনিক সুবিধা যুক্ত এবং সরকারের সুষ্ঠু পরিচালনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
পিএম মোদী করবেন কর্তব্য ভবন-৩ এর উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ দুপুর ১২টা বেজে ১৫ মিনিটে কর্তব্য পথ স্থিত কর্তব্য ভবন-৩ এর উদ্বোধন করবেন। এই ভবন ‘সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্ট’-এর অধীনে তৈরি হওয়া কমন সেন্ট্রাল সেক্রেটারিয়েট (CSS) এর প্রথম বিল্ডিং। সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় প্রধানমন্ত্রী একটি জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন। এই নতুন শুরুটা দিল্লির প্রশাসনিক কাঠামোতে একটা বড় পরিবর্তন নিয়ে আসছে।
কি এই কর্তব্য ভবন এবং কেন এটা বিশেষ
কর্তব্য ভবন-৩ জনপথে ১.৫ লক্ষ বর্গ মিটার ক্ষেত্রফলে বিস্তৃত একটি বিশাল সরকারি ভবন। এতে গ্রাউন্ড ফ্লোর ও দুটি বেসমেন্ট সহ মোট ১০টি তলা রয়েছে। এই ভবনটিকে বিশেষভাবে শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশ-বান্ধব এবং প্রযুক্তি নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে।
এই ভবনের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
- ৬০০টি গাড়ির পার্কিংয়ের ক্ষমতা
- ২৪টি বড় ও ২৬টি ছোট কনফারেন্স রুম
- স্মার্ট এন্ট্রি সিস্টেম ও ইলেকট্রনিক নজরদারি
- কমান্ড সেন্টার, সোলার প্যানেল ও ই-ভেহিকেল চার্জিং স্টেশন
- বর্জ্য জলের পুনর্ব্যবহার এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- শক্তি খরচে ৩০ শতাংশ হ্রাস
- সাউন্ড প্রুফ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কাঁচের জানালা
এই ভবনটি পুরনো ভবনগুলির তুলনায় কম শক্তি খরচ করে এবং এতে অত্যাধুনিক সুরক্ষা ও নজরদারি ব্যবস্থা রয়েছে।
কোন কোন মন্ত্রক স্থানান্তরিত হবে
কর্তব্য ভবন-৩ এ যে মন্ত্রকগুলি স্থানান্তরিত করা হবে, সেগুলি হল –
- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
- বিদেশ মন্ত্রক
- গ্রামীন বিকাশ মন্ত্রক
- ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক (MSME)
- ডিওপিটি (কর্মী মন্ত্রক)
- পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক
- প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার কার্যালয়
এই মন্ত্রকগুলিকে শাস্ত্রী ভবন, কৃষি ভবন, নির্মাণ ভবন ও উদ্যোগ ভবনের মতো পুরনো ভবন থেকে এখানে স্থানান্তরিত করা হবে। এই পুরনো ভবনগুলি ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ এর দশকে তৈরি করা হয়েছিল এবং এখন এদের অবস্থা জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
কেন দরকার ছিল নতুন কর্তব্য ভবনের
শহুরে কার্য মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর জানিয়েছেন যে পুরনো ভবনগুলির বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ সরকারের উপর বিশাল বোঝা ছিল। অনেক বিল্ডিং বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল। অন্যদিকে, মন্ত্রকগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও ফিজিক্যাল ডিসটেন্সিংয়ের কারণে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল।
সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্ট ও অন্যান্য ভবন
সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্টের অধীনে দিল্লির কর্তব্য পথের দুই পাশে ১০টি নতুন কর্তব্য ভবন তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনা ভারত সরকারের মন্ত্রক ও বিভাগগুলির জন্য একটি সাধারণ, সুবিধাজনক ও অত্যাধুনিক অফিস স্পেস তৈরি করার একটি উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প।
কর্তব্য ভবন-৩ এর পরে কর্তব্য ভবন-১ ও ২ ও শীঘ্রই তৈরি হয়ে যাবে। মন্ত্রী খট্টর জানিয়েছেন যে এগুলির কাজ শেষ পর্যায়ে আছে এবং বাকি সাতটি ভবন এপ্রিল ২০২৭ এর মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
নর্থ ও সাউথ ব্লকের ভবিষ্যৎ
কর্তব্য ভবনগুলির নির্মাণ হয়ে গেলে যখন সমস্ত মন্ত্রক নতুন চত্বরে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে, তখন নর্থ ও সাউথ ব্লক-কে মিউজিয়ামে পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।
এই ঐতিহাসিক ভবনগুলিকে ‘যুগে যুগে ভারত মিউজিয়াম’-এ রূপান্তরিত করা হবে। এই মিউজিয়ামগুলিতে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস থেকে আধুনিক ভারত পর্যন্ত যাত্রা দেখানো হবে।
মহাভারত কাল, স্বাধীনতা সংগ্রাম, সংবিধান নির্মাণ, ভারতীয় শিল্প, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান এর বিকাশের ঝলক এখানে মূল কাঠামোতে কোনো রকম পরিবর্তন না করে পেশ করা হবে।
সুসংহত প্রশাসনের জন্য বড় পদক্ষেপ
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় (PMO) জানিয়েছে যে এই পরিবর্তন শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচারের নয়, বরং প্রশাসনিক কার্যপ্রণালীতে ব্যাপক পরিবর্তনের অংশ। কর্তব্য ভবন-৩ এর উদ্দেশ্য হল সরকারি কাজ কেন্দ্রীভূত করা, সমন্বয় উন্নত করা ও দ্রুত প্রশাসন সুনিশ্চিত করা। এতে শুধু মন্ত্রকগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়বে তাই নয়, ফাইল মুভমেন্ট, মিটিং ও নীতি নির্ধারণের মতো প্রক্রিয়াগুলিও আরও বেশি কার্যকর ও সময়োপযোগী হবে।
কত খরচ হয়েছে ও কবে শেষ হবে প্রোজেক্ট
সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রোজেক্টের খরচ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা বলা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত শেষ হওয়ার কথা। সমস্ত মন্ত্রকের জন্য মোট ১০টি কর্তব্য ভবন তৈরি করা হবে, যার ফলে সরকারের কাজকর্ম একটি চত্বরের মধ্যে থেকেই চালানো সম্ভব হবে।