কোজাগরী পূর্ণিমা ২০২৫, যা শারদ পূর্ণিমা নামেও পরিচিত, সোমবার ৬ অক্টোবর পালিত হবে। এই দিনে মা লক্ষ্মী, ভগবান বিষ্ণু এবং চন্দ্রদেবের বিশেষ পূজা করা হয়। ভক্তরা পঞ্চোপচার বিধি মেনে পূজা করে ক্ষীর চন্দ্রালোকে নিবেদন করেন। সঠিক মুহূর্ত এবং উপায়গুলি পালন করলে ঘরে সুখ, সমৃদ্ধি এবং মানসিক শান্তি আসে।
Kojagiri Purnima 2025: এই বছর কোজাগরী পূর্ণিমা বা শারদ পূর্ণিমা ভারতে সোমবার, ৬ অক্টোবর পালিত হবে। এই উৎসব বিশেষভাবে মা লক্ষ্মী, ভগবান বিষ্ণু এবং চন্দ্রদেবের পূজার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পূজা পঞ্চোপচার বিধি অনুসারে করা হয় এবং রাতে চন্দ্রমার আলোতে ক্ষীর নিবেদন করা হয়। ভক্তরা ঘর পরিষ্কার করে, গঙ্গাজল ছিটিয়ে এবং ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে মুহূর্ত অনুযায়ী পূজা করেন। এই দিনের উপায় এবং পূজা পদ্ধতি ঘরে ধন-সম্পত্তি, মানসিক শান্তি এবং সুখ-সমৃদ্ধি আনতে সহায়তা করে।
শারদ পূর্ণিমার গুরুত্ব ও তিথি
হিন্দু ধর্মে কোজাগরী পূর্ণিমা বা শারদ পূর্ণিমাকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এই বছর এই উৎসব সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পালিত হবে। আশ্বিন মাসের শারদ পূর্ণিমাতে এই পূজা বিশেষভাবে মা লক্ষ্মী, ভগবান বিষ্ণু এবং চন্দ্রদেবের প্রতি উৎসর্গীকৃত। সোমবার হওয়ায় এই বছর শিব পূজার গুরুত্বও বৃদ্ধি পাবে। জ্যোতিষীয় ও ধার্মিক বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনের পূজা থেকে ধন-সম্পত্তির বৃদ্ধি, মানসিক শান্তি এবং ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
কোজাগরী পূর্ণিমা ২০২৫ এর মুহূর্ত
কোজাগরী পূর্ণিমার তিথি ৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে দুপুর ১২টা ২৩ মিনিটে শুরু হবে এবং ৭ অক্টোবর সকাল ৯টা ১৬ মিনিটে শেষ হবে। বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে নিশিতা কালে পূজার মুহূর্ত রাত ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে রাত ১২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এই দিনে চন্দ্রোদয় সন্ধ্যা ৫টা ৪৭ মিনিটে হবে। যদি কেউ পূর্ণিমার স্নান বা দান করতে চান, তাহলে তা ৭ অক্টোবর সকাল সওয়া নটা পর্যন্ত করা যেতে পারে।
কোজাগরী পূর্ণিমা ২০২৫ পূজন পদ্ধতি
কোজাগরী পূর্ণিমায় পূজার পদ্ধতি সহজ কিন্তু পবিত্র হয়। সকালে উঠে ঘর এবং পূজা স্থল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন। পূজা স্থলে গঙ্গাজল ছিটিয়ে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান।
পঞ্চোপচার বিধি অনুসারে পূজা করুন, যার মধ্যে চন্দন, প্রদীপ, ফুল, ফল, নৈবেদ্য ইত্যাদি দেবী-দেবতাদের অর্পণ করুন। মা লক্ষ্মী এবং ভগবান বিষ্ণুর পূজা ও আরতির পর রাতে চন্দ্র উদিত হলে চন্দ্রদেবকে দুধ-জল দিয়ে অর্ঘ্য দিন। রাতে চন্দ্রমার আলোতে ক্ষীর রেখে পরের দিন সকালে প্রসাদ রূপে গ্রহণ করুন।
কোজাগরী পূর্ণিমার বিশেষ উপায়
এই দিনে কিছু বিশেষ উপায় পালন করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি এবং ধন-বৈভব বৃদ্ধি পায়। মানসিক শান্তির জন্য চন্দ্রোদয়ের পর জলে গঙ্গাজল, সাদা ফুল এবং চিনি মিশিয়ে চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দিন। মা লক্ষ্মীর পূজায় ১১টি কড়ি অর্পণ করা লাভজনক বলে মনে করা হয়।
ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে ঘরের মূল প্রবেশদ্বারে রাখা শুভ হয়। সন্ধ্যায় তুলসী গাছের কাছে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান, এতে পরিবারে ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে। চাল, দুধ, চিনি, কেশর এবং শুকনো ফল দিয়ে ক্ষীর তৈরি করে রাতে চন্দ্রমার আলোতে রাখা লাভজনক বলে মনে করা হয়।
কোজাগরী পূর্ণিমার রাতের গুরুত্ব
কোজাগরী পূর্ণিমার রাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় কারণ চন্দ্র এই রাতে ১৬ কলায় পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই রাতে পৃথিবীতে অমৃতময়ী চন্দ্রালোকের বর্ষণ হয়। এই রাতে মা লক্ষ্মী পৃথিবীতে ভ্রমণ করেন। তাই ভক্তরা রাতে মা লক্ষ্মীর বিশেষ পূজা-অর্চনা করেন।
ধার্মিক কাহিনী অনুসারে, এই রাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহারাস এবং ভগবান শিবের গোপেশ্বর রূপের পূজা করা হয়। চন্দ্রমার পূর্ণ আলোতে ক্ষীর রাখা এবং তাকে ভোগ রূপে গ্রহণ করা শুভ বলে মনে করা হয়।
পূজায় যা মনে রাখতে হবে
পূজা করার সময় ঘর এবং পূজা স্থল পরিষ্কার থাকা জরুরি। পঞ্চোপচার বিধি অনুসারে অর্চনা করুন। রাতে চন্দ্রমার দর্শন এবং দুধ-জল অর্পণ করা আবশ্যক। এই দিন ঝগড়া, নেতিবাচকতা এবং অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
পূজন এবং উপায় পালনের পাশাপাশি ভক্তদের এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে মানসিক শান্তি এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরি। এই কারণেই কোজাগরী পূর্ণিমার উৎসব কেবল পূজা পর্যন্ত সীমিত নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং মানসিক সন্তুষ্টিরও সুযোগ প্রদান করে।
কোজাগরী পূর্ণিমার লাভ
- ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি এবং ধন-সম্পদ বৃদ্ধি
- মানসিক শান্তি ও ইতিবাচক শক্তির অনুভব
- বাবা-মা ও পরিবারের জন্য আশীর্বাদ
- সন্তান ও গার্হস্থ্য জীবনে সুখ
- আধ্যাত্মিক উন্নতি ও জ্ঞান বৃদ্ধি
কোজাগরী পূর্ণিমা ২০২৫ এর উৎসব কেবল ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রাখে না, বরং এটি জীবনে ইতিবাচক শক্তি ও আনন্দ আনার সুযোগও প্রদান করে। এই দিন বিধি অনুসারে পূজা ও উপায় পালন করলে মা লক্ষ্মী এবং চন্দ্রমার আশীর্বাদে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি এবং পরিবারে ভারসাম্য বজায় থাকে।
ভক্তদের উচিত যে তারা এই দিনের মুহূর্ত, পূজা পদ্ধতি এবং উপায়গুলো অনুসরণ করেন এবং রাতে চন্দ্রমার আলোতে ক্ষীর রেখে তা গ্রহণ করেন। এতে আধ্যাত্মিক লাভের পাশাপাশি মানসিক শান্তি এবং সমৃদ্ধির অনুভবও হয়।