ডিপোর্টেশন কাণ্ড: বীরভূমের দুই পরিবার–সহ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও একাধিক শিশুকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে তীব্র বিতর্ক ছড়াল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত বেঞ্চে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্র কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানতে চান—মাত্র দু’দিনে কীভাবে নাগরিকত্ব যাচাই শেষ হল এবং কেন তাড়াহুড়ো করে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হলো?
হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানি, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাখ্যা নিয়ে অসন্তুষ্ট হন। আদালত স্পষ্ট জানায়, আইন অনুসারে ডিপোর্টেশনের আগে নাগরিকত্ব যাচাই করতে অন্তত ৩০ দিন সময় বরাদ্দ থাকে। অথচ দিল্লি পুলিশ ও প্রশাসন মাত্র দু’দিনের মধ্যেই ৩০ জনকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে সীমান্ত পেরিয়ে পাঠিয়ে দিল। আদালতের প্রশ্ন, এত বড় সিদ্ধান্ত এত তাড়াহুড়ো করে নেওয়ার কারণ কী?
কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশের দাবি
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা জানান, যেহেতু শ্রমিক পরিবারগুলিকে দিল্লি থেকে আটক করা হয়েছিল এবং সেখান থেকেই বাংলাদেশি চিহ্নিত করে অসম সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাই মামলা শোনার এখতিয়ার কলকাতা হাইকোর্টের নয়। তাঁদের মতে, আসল জায়গা দিল্লি বা গুয়াহাটি হাইকোর্ট। পাশাপাশি কেন্দ্র দাবি করে, কেবল ওই দুই পরিবার নয়, আরও বহু মানুষকেই নাগরিকত্ব প্রমাণের বৈধ নথি না থাকায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মামলাকারীদের দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি
আদালত শুনানিতে লক্ষ্য করে, হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়েরের আগেই পরিবারের লোকজন জেনে গিয়েছিলেন যে তাঁদের আত্মীয়রা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। অথচ ডিপোর্টেশনের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। সমন্বয়ের অভাবে কলকাতা ও দিল্লি—দু’জায়গায় আলাদা মামলা দায়ের হয় বলে জানায় মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী। আদালত আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে—কলকাতায় মামলা চালানো হবে নাকি দিল্লি হাইকোর্টে তা চ্যালেঞ্জ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।
শ্রমিক পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়
মামলায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন বীরভূমের শ্রমিক পরিবারগুলির ভাগ্য। অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরানো সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। আইনজটিলতায় মামলাকারীরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেরি করায় তাঁদের ফেরার পথ আরও কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে করছে আইনজ্ঞ মহল।
মাত্র দু’দিনে ৩০ বাঙালিকে বাংলাদেশে পাঠানোয় প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। বীরভূমের দুই শ্রমিক পরিবার–সহ অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও শিশুদের ডিপোর্ট করার ঘটনায় কেন্দ্র ও দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে। নাগরিকত্ব যাচাইয়ে আইনগত প্রক্রিয়া মানা হয়নি বলেই মত বিচারপতিদের।