দুর্গাপুজোয় প্রতি বছর রাজ্য সরকারের অনুদান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। এবার সেই বিতর্ক আদালত অবধি গড়াল। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হল মামলা—“কেন রাজ্য সরকার ট্যাক্সদাতার অর্থ থেকে পুজো কমিটিকে অনুদান দেবে?”। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আলোচনায় উঠে এল ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম সরকারি সহায়তার তর্ক।
বিচারপতি সুজয় পালের বেঞ্চে শুনানি
আইনজীবী শামিম আহমেদ সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চে দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই মামলাটির শুনানি হতে পারে। ফলে পুজোর আগেই বড় সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
রাজ্যের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক
প্রতিবছর দুর্গাপুজোর আগে রাজ্য সরকার ঘোষণা করে বিপুল অঙ্কের আর্থিক অনুদান। এই অর্থ বিভিন্ন ক্লাব ও পুজো কমিটির হাতে পৌঁছে যায়। সমর্থকদের দাবি, এই অনুদান শুধু উৎসব নয়, সামাজিক উন্নয়ন, আলো–সজ্জা, সড়ক সংস্কার থেকে শুরু করে বহু সাময়িক কর্মসংস্থান তৈরি করে। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন—ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকারি অর্থ ব্যয় কি যুক্তিযুক্ত?
ট্যাক্সদাতার টাকা নিয়ে উঠল প্রশ্ন
মামলাকারীর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ ট্যাক্স দেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা কর্মসংস্থানের জন্য। কিন্তু সেই টাকা যদি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খরচ হয়, তবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাঁর যুক্তি, সরকারের কাজ ধর্মকে উৎসাহ দেওয়া নয়, বরং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা।
রাজনীতির মঞ্চে নতুন ইস্যু
মামলার খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। বিরোধীরা বলছে, রাজ্যের অনুদান ঘোষণাই ভোটার তুষ্টিকরণের রাজনীতি। অন্যদিকে শাসকদলের বক্তব্য, দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগ, এটিকে কেন্দ্র করে বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হয়। ফলে সরকারের দায়িত্ব, উৎসবে সহযোগিতা করা। এই টানাপোড়েন এখন আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে।
আদালতের সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে জল্পনা
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালত এখানে সংবিধানের মৌলিক নীতির ওপর জোর দিতে পারে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে আদালত ধর্মীয় কার্যক্রমে সরকারি ব্যয়ের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছে। তবে পুজোকে সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে দেখানো হলে ভিন্ন ব্যাখ্যাও উঠে আসতে পারে। ফলে হাইকোর্ট কী অবস্থান নেয়, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন।
পুজো কমিটিগুলির দুশ্চিন্তা
মামলার খবর জানাজানি হতেই বহু পুজো কমিটি চিন্তায় পড়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যেই রাজ্যের ঘোষণার ওপর ভরসা করে বাজেট নির্ধারণ করেছেন। যদি আদালত রায় দেয় যে সরকারি অনুদান দেওয়া যাবে না, তবে আর্থিক সংকট দেখা দেবে অনেক ক্লাবে। সেই আশঙ্কায় কার্যত দিশেহারা বহু আয়োজক।
উৎসব বনাম আইনের লড়াই
আসন্ন দুর্গাপুজোর আবহে মামলা ঘিরে এখন তুমুল আলোড়ন। একদিকে উৎসবের আনন্দ, অন্যদিকে আইনের কড়া নজর। রাজ্যের সিদ্ধান্ত কি টিকে যাবে আদালতে, নাকি অনুদান বন্ধের পথে হাঁটবে প্রশাসন—এই প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজছে বাংলার মানুষ। মামলার শুনানির দিন গোনা শুরু হয়ে গিয়েছে।